সিলেট অঞ্চলে ৬দিনে ৬জনের মৃত্যু, আহত ৪০॥ যাত্রী-চালকদের ধৈর্যচ্যুতিকে দায়ী করলেন বিশেষজ্ঞরা
ঈদযাত্রা ॥ সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ৮:৪৬:১১ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম :
ঈদযাত্রায় মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। আবার যাত্রী-চালকদের মধ্যে রয়েছে ধৈর্যের অভাব। সড়ক-মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা। ফলে সড়ক অনেকটাই ‘অনিরাপদ’ বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে তিন কারণে এ মহাসড়ক অনিরাপদ সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে সাম্প্রতিককালে ট্রাকের চলাচল বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট ছয় লেনের কাজ শুরু হওয়ায় মহাসড়কে অনেক ড্রাম ট্রাক চলাচল করছে।
পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে বেড়েছে সড়কে পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচলও । রয়েছে পর্যটকদের প্রবাহও। সবমিলিয়ে এ মহাসড়কের যানবাহনের যথেষ্ট চাপ রয়েছে। ঈদের কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে তুলনামূলক বেশি যানবাহন চলাচল করছে। ফলে অনেক রুটে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের ধোপাগুলে ট্যুরিস্ট বাস উল্টে গতকাল ২০ জন যাত্রী আহত হন। এছাড়া, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে সম্প্রতি সিএনজি অটোরিক্সা দুর্ঘটনায় কয়েকজন যাত্রী হতাহত হয়েছেন মর্মে খবর পাওয়া গেছে।
ঈদযাত্রায় মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য যাত্রী-চালকদের ‘ধৈর্যচ্যুতি’কে দায়ী করলেন হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিওনের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চালকদের ঝিমুনীভাবের কারণে অনেক সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে তারা গতকাল মঙ্গলবার থেকে মহাসড়কে অভিযানে নেমেছেন। এদিন মহাসড়কের কুরুয়াবাজার এলাকায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দায়ের করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ২৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেপরোয়া গতি ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনও রয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মিঠু জানান, ২৮ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে ৭ টি দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ৪০ আহত হয়েছেন।
তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সিলেট অঞ্চলে মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়তির দিকে। এর মধ্যে মুখোমুখি এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার হার বেশি।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, কিছু লক্কড়-ঝক্কড় বাস যেগুলো সারা বছর সিরিয়াল পায় না, সেগুলো ঈদের সময় রাস্তায় নেমে পড়ে। এগুলো রিজার্ভ হিসেবে চলে। যে রাস্তায় ছোট বাসও চলে না, সে রাস্তায় বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাস ঢুকে পড়ারও উদাহরণ রয়েছে। মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন ও ভটভটিও সরানো যায়নি। সড়ক নিরাপত্তার এটি একটি বাধা বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশ আগেই ঘোষণা দিয়েছে, ‘ঈদযাত্রায় কেউ পণ্যবাহী যানবাহনে কিংবা অন্য কোনো যানবাহনের ছাদে, খোলা ট্রাক বা পিকআপে যাত্রী উঠাতে পারবেন না। যারা অনিরাপদ যানবাহনে যাত্রী ওঠাবেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কোনো ধরনের ফিটনেসবিহীন, অনিরাপদ, লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন বা বাস সড়কে যেন না চলাচল করে-এই অনুরোধ রমজানের পূর্বেই জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এরপরও অনেক যানবাহন রাস্তায় নেমে পড়ে বলে তাদের বক্তব্য। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এবার ঈদযাত্রায় হাইওয়েতে তারা ড্রোনের সহায়তা নিচ্ছেন। ড্রোনের সহায়তায় চিত্র দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা তারা নিতে পারবেন। হাইওয়ের অনেক রাস্তা চার লেন হচ্ছে। কোথাও কোথাও হয়ে গেছে। এখন রাস্তায় যদি কোনো যানবাহন তাৎক্ষণিক অকেজো হয়ে পড়ে, তাহলে সেটি সরানো সহজ হবে। ত্রুটিপূর্ণ কোনো যানবাহন যাতে ঈদে সড়কে না নামে, সেটি নিশ্চিত করতে তারা নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি ঢাকায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, থ্রি-হুইলার মহাসড়কের একটি বড় সমস্যা। যানজট ও দুর্ঘটনার বড় কারণ। উচ্চ আদালত কর্তৃক এসব নছিমন, করিমন, ভটভটি মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক ধরনের চেষ্টা সত্ত্বেও আমরা মহাসড়ক থেকে এসব প্রত্যাশিত মাত্রায় কমাতে পারিনি। এর মধ্যে যদি এসব ঈদযাত্রায় মহাসড়কে নামে; তবে তা হবে ঝুঁকির কারণ। এ জন্য এ বিষয়ে প্রত্যেক জেলার পুলিশ সুপার ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের দায়িত্ব নিতে হবে।