পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাব
হাওরের পাকা ধান নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ২:২৪:০১ অপরাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে: সুনামগঞ্জের হাওরে হাওরে পাকা ও আধাপাকা ধানের ঢেউ দুলছে। বাউরি হাওয়ায় নাচছে ধানের শীষ। প্রকৃতি সুন্দর এই দৃশ্য মনে দোলা দিলেও জলাবদ্ধতা আর পাহাড়ি ঢলের শঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে হাওরের কৃষকদের।
গত মঙ্গলবার রাতে বজ্রসহ শিলাবৃষ্টিতে দিরাই উপজেলার কালিয়াকুটা হাওরের পূর্ব অংশে প্রায় ২’শ হেক্টর বোরো জমির ফসলের ৭০ শতাংশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলাবদ্ধতা আর শিলাবৃষ্টির শঙ্কার মধ্যে জেলার বিভিন্ন হাওরে ধান কাটছেন কৃষকরা। তবে হাওরের বেশির ভাগ জমির ফসল কাঁচা থাকায় বিপাকে কৃষকরা। অপরদিকে জলাবদ্ধতা, পাহাড়ি ঢল, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির কারণে হাওরের জন্য পর্যাপ্ত ধানকাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বিগত সময়ে বাইরের জেলা থেকে অস্থায়ীভাবে বিপুল সংখ্যক দিনমজুর আসলেও এবার তার বিপরীত।
কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর ও ধানকাটার আধুনিক মেশিনের প্রচলনে সনাতন পদ্ধতিতে ধান কাটায় মুনাফা কম পাওয়ায় শ্রমিকদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ফলে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া, হাওরের পাকা ধান দ্রুত সময়ে কাটতে ভর্তুকী মূল্যে জেলার ১২ উপজেলার সাড়ে ৮’শ কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর মেশিন কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে হার্ভেস্টর মেশিন হাওরের উঁচু এলাকার ধান কাটতে সহায়ক হলেও তুলনামূলক নিচু উর্বর জমির ধান কাটতে না পারায় বিপাকে কৃষকরা। তাই সনাতন পদ্ধতিতে ধান কাটতে শ্রমিকদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের। পর্যাপ্ত শ্রমিক না পাওয়ায় হাওরে থাকা ফসল নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার খাই হাওরের কৃষক সিজাউল ইসলাম জানান, প্রতিবছর সিলেটের কানাইঘাট এলাকায় থেকে আমার বাড়িতে ধান কাটার শ্রমিক আসতো। এবারও ১০ জন শ্রমিক আসার কথা ছিল। গতকাল বুধবার ফোন দিয়ে তারা আসবেনা বলে জানিয়েছেন। এখন হাওরের ধান নিয়ে চিন্তায় আছি। কিভাবে এতো ধান কাটবো।
সদর উপজেলার দেখার হাওরের কৃষক রহমত মিয়া জানান, হার্ভেস্টর মেশিন পানিতে বা নরম জমিতে ধান কাটতে পারে না। তাই নিচু এলাকায় জমির ধান কাটার জন্যে শ্রমিকের উপর নির্ভর করতে হয়। এখন আগের মতো শ্রমিক পাওয়া যায়না। আকাশের অবস্থাও ভালোনা। কবে কি হয় বলা যায় না।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০ হাজার শ্রমিক সুনামগঞ্জে ধান কাটতে এসেছেন। জেলায় ২ লাখ নিজস্ব শ্রমিক রয়েছে। তাছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে আরও ৩০ হাজার অনিয়মিত শ্রমিক ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এতে হাওরে শ্রমিক সংকট দেখা দিবে না বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।
গতকাল বুধবার পর্যন্ত জেলায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। প্রতিদিন ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল কাটা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।