সুনামগঞ্জের হাওরে ‘যাদুর মেশিন’, স্বস্তিতে কৃষক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ৩:০৪:২২ অপরাহ্ন

শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের কৃষক সাইদুর রহমান। চলতি বোরো মওসুমে ৭ কেয়ার জমি চাষ করে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে ছিলেন এই চাষী। একদিকে হাওরের বৈরী আবহাওয়া অন্যদিকে শ্রমিক সংকটে ফসলের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তার শেষ ছিলনা তার। কম্বাইন হার্ভেস্টর নামের ‘যাদু’র মেশিন কৃষক সাইদুরের চিন্তার সাগরে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। কম্বাইন হার্ভেস্টর মেশিনে একদিনের মধ্যে ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন সাইদুর রহমান। সাইদুরের মতো জেলার লক্ষাধিক কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে অত্যাধুনিক এই কৃষি যন্ত্রটি।
জানা যায়, হাওরে হাওরে এখন সোনালী ধানের সমারোহ। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যে দিকে চোখ যায় পাকা আর পাকা ধান। মাঠে মাঠে দুলছে সোনালি ধান। পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় হাওরের অর্ধেকের বেশির ধান পেকে যাওয়ায় ধান কাটা নিয়ে বিপাকে হাওরের কয়েক লক্ষ কৃষক। হাওরের শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় পাহাড়ি ঢল,জলাবদ্ধতা ও বৈরী আবহাওয়ায় পাকা ধান নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা বিপাকে পড়ায় ‘কম্বাইন হার্ভেস্টর মেশিন তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে। বর্তমানে জেলার ১২ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে কম্বাইন হার্ভেস্টর মেশিনের মাধ্যমে চলছে ধান কাটার কাজ। অল্প সময়ে মাঠের ধান কর্তন ও ঝাড়াই-মাড়াইসহ ফসল বিপণনের ৮০ ভাগ করছে এই কম্বাইন হার্ভেস্টর।
যেখানে একজন কৃষকের জমি থেকে ধানকাটা, মাড়াইসহ অন্যান্য কাজে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয় সেখানে স্বল্প টাকায় ও শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া দ্রুত সময়ে ধান কাটতে পেরে খুশি কৃষকরা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা খাই হাওরের কৃষক সুহেল মিয়া বলেন, আগে ধান কাটতে অনেক কষ্ট করতে হতো। শ্রমিকের অপেক্ষায় ধান নষ্ট হয়ে যেতো। বন্যা ও শিলাবৃষ্টির ভয়তো আছেই। এখন ধানকাটার মেশিন দিয়ে দ্রুত ধান ঘরে তোলা যায়। এটি যেনো যাদুর মেশিন।
মনিরুজ্জামান মনির নামের এক হার্ভেস্টর মেশিন মালিক বলেন, আমি হার্ভেস্টর মেশিন দিয়ে দিনে রাতে ধান কাটতেছি। দিনে রাতে মিলে ৫০-৭০ কেয়ার জমির ধান কাটা যাচ্ছে। কৃষকরা হার্ভেস্টর দিয়ে ধান কাটতে পেরে খুশি। এই সুবিধা আগে ছিলনা। এই মেশিন কৃষকের ভাগ্য ফিরেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২ উপজেলায় ৭০℅ ভর্তুকি মূল্যে সাড়ে ৮০০ হার্ভেস্টর মেশিন বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই করে এই মেশিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।
এবার সুনামগঞ্জের ১৩৭ টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আবদকৃত জমি থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা করছে কৃষি বিভাগ।