হাওরের কৃষিতে নারী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১:৫৯:৫৬ অপরাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওর এলাকার কৃষাণ-কৃষাণীরা। এই কর্মব্যস্ত কয়েক লক্ষ চাষীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী। ধানের এই বাম্পার ফলনে পুরুষের তুলনায় হাওরে নারীদের অবদান কম নয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। একদিকে হাওরে যেমন পুরুষ শ্রমিক ধান কাটা ও সংগ্রহের কাজ করছেন; অন্যেিদক ধান মাড়াই ও শুকানোসহ গোলায় তোলার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন নারীরাও।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবার সুনামগঞ্জে ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলায় আবাদকৃত ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমির বেশিরভাগ পেকে যাওয়ায় ধান কাটা ও গোলায় তুলতে ৩ লাখের উপরে শ্রমিক কাজ করছেন। তবে কাটা ধান মাড়াই, শুকানো ও বিপণনের কাজে দুই লাখের কাছাকাছি নারী ও শিশু অস্থায়ীভাবে এই মওসুমে শ্রম দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলার প্রায় মোট ৩ লাখ ৭৮ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা জমিতে বীজ বপন, রোপণ ও ধান কাটাতে কাজ করেন।
অপরদিকে, পরিবারের নারী সদস্যরা, গবাদিপশুর জন্য খড় শুকানো, খলায় ধান শুকানো, মরা ধান আলাদা করাসহ গোলায় তুলতে কাজ করে থাকেন। জেলার শান্তিগঞ্জের খাই হাওর, সদর উপজেলার দেখার হাওর, বিশ্বম্বরপুর উপজেলার করচার হাওর ও তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওরের নিকটবর্তী কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাওরের বিভিন্ন ক্ষেতে ধান কাটছে পুরুষরা। আর নারীরা হাওরের কান্দা ও কীত্তায় মেশিনে মাড়াই, খড়-নাড়া, ধানখলা তৈরি, ধান শুকানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের কাজে সাহায্য করছে পরিবারের বিভিন্ন বয়সী শিশু ও বয়স্ক সদস্যরা। এর মধ্যে স্কুলপড়ুয়া বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। কৃষক পরিবারের পাশাপাশি দরিদ্র ও শ্রমজীবী পরিবারের নারীরা অস্থায়ীভাবে শ্রমিক হিসেবে হাওরে কাজ করে থাকেন।
বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার কলাইয়া গ্রামের বাসিন্দা দীপ্তি রাণী দাস তপ্ত দুপুরে মাঠে ধান শুকানোর কাজ করছেন। হাওরে ৭ খানি জমি চাষ করেছেন দীপ্তির রাণীর স্বামী। পরিবারের পুরুষ সদস্য ধান কেটে মাঠে তুলে দিয়ে গেছেন। প্রচন্ড দাবদাহের মাঝে ধান শুকানোর পর এই ধান গোলায় তুলেন দীপ্তি ও তার দুই মেয়ে। দীপ্তি রাণী দাস বলেন, খলায় ধান শুকাই, ওড়াই, খড় শুকাই, ধান গোলায় তুলি। এর পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজও সামলাতে হয় আমাদের। কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণের ব্যাপারে জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরে বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। এই বাম্পার ফলনে নারী কৃষকের পাশাপাশি কৃষাণীদেরও অবদান রয়েছে। হাওরে যে শ্রমিক কাজ করছেন তাঁর অর্ধেক নারী বলে জানান তিনি।