এলাকাবাসীর চলাচলে দুর্ভোগ
ওসমানীনগরে ব্রিজের কাজ না করে ১৫ লক্ষাধিক টাকার বিল উত্তোলন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ২:০৮:০৪ অপরাহ্ন
মো. কয়েছ মিয়া, ওসমানীনগর (সিলেট) থেকে: ওসমানীনগরে ব্রিজের কাজ না করেই ঠিকাদার ১৫ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুরাতন ব্রিজ ভাঙার পর নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করলেও গত এক বছর ধরে তিনি টালবাহানা করে আসছেন। এ নিয়ে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিরা।
জানা গেছে, ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের মোতিয়ারগাঁও, হলিমপুর, ভাগলপুর, কলারাইসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষের যোগাযোগের জন্য ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মোতিয়ারগাঁওয়ের ক্ষুদির খালের ওপর ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে কাজটি পায় সিলেটের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নিজাম এন্টারপ্রাইজ। কাজ পাওয়ার পর পুরোনো ব্রিজটি ভেঙে মালামাল বিক্রি করে দেয়ার পর নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য একপাশের বেইজের সামান্য অংশের কাজ দেখিয়ে ঠিকাদার ১৫ লক্ষাধিক টাকার বিল উত্তোলন করে নেন। বিল উত্তোলনের পর ব্রিজ নির্মাণের স্থান থেকে যাবতীয় মালামাল নিয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে চলে যায়।
পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগসহ তিনবার লিখিত শোকজ করা হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কোন সাড়া দেয়নি। দীর্ঘ এক বছরেও ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে ব্রিজ নির্মাণের স্থানের পাশে অস্থায়ীভাবে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করছেন।
মোতিয়ারগাঁওয়ের তাজ উদ্দিন ও তছর উদ্দিন জানান, পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করায় আমরা অনেক কষ্টে আছি। কৃষকরা এখন বোরো ধান তুলছেন কিন্তু ব্রিজ না থাকায় অনেক কষ্টে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ করার দাবি জানান তারা।
এদিকে, গত সোমবার উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ব্রিজ নির্মাণের বিলম্বের বিষয়টি উত্থাপন করেন গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পীর মো. মজনু মিয়া। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা। এসময় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করা হয় সভায়।
গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পীর মো. মজনু মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটি না করার কারণে এলাকার মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। বিষয়টি সোমবার উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন প্রয়োজনে বর্তমান ঠিকাদারের ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে ব্রিজটি সম্পন্ন করে দিবেন।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা সুহেল রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান ১৫ লক্ষাধিক টাকার বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। দীর্ঘ এক বছর ধরে কাজ বন্ধ রাখার পর আমরা মৌখিকভাবে একাধিকবার যোগাযোগ করে কোন ফল না পেয়ে তিনবার লিখিতভাবে শোকজ করেছি, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোন উত্তর দেয়নি। সে কাজ না করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব আমরা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নিজাম উদ্দিন রুকু জানান, ব্রিজটি নির্মাণের জন্য কাজটির দায়িত্ব একজনকে দিয়েছিলাম। সে কাজটি ফেলে গিয়ে আমাকে বিপদে ফেলেছে। আগামী সপ্তাহে আমি কাজটি শুরু করবো।