সুনামগঞ্জ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দ্রুত ধান কাটার তাগিদ প্রশাসনের
হাওরে বন্যার পূর্বাভাস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২৪, ৬:০০:১৩ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :চলতি সপ্তাহে সুনামগঞ্জে ও সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীরণ কেন্দ্র। আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাসের কথা জানিয়ে হাওরে অবশিষ্ট বোরো ধান দ্রুত কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী । এদিকে হাওরে আকস্মিক বন্যার শঙ্কা জানিয়ে দ্রুত ধান কাটতে কৃষকদের আহ্বান জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জমির ধান কাটার পাশাপাশি মাড়াই করা ধান, খড় হাওর থেকে নিরাপদে নিয়ে রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে দপ্তর দুটি। ধান কাটা ও আগাম বন্যার ব্যাপারে সতর্কতা হিসেবে বিভিন্ন উপজেলায় মাইকিং করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, এমন পরামর্শ পেয়ে কৃষকেরা হাওরের ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন বিগত কয়েক দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুবিধা হয়েছে। সারা দেশে তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় কৃষকদের জন্য তা অনেকটা আশীর্বাদের মতোই। রোদ বেশি থাকায় হাওরে ধান কেটে, সেখানেই মাড়াই ও শুকানোর কাজ সেরে ফেলছেন তাঁরা। তবে এখনো অনেক হাওরে পাকা ধান রয়ে গেছে। আর কয়েকদিন পেলে নির্বিঘেœ ধান কেটে গোলায় তুলতে পারবেন তারা। এই সময় বৃষ্টি মানেই বিড়ম্বনা। এতে ধানকাটা, মাড়াই ও শুকাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাওরে বুধবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ৯৭ এবং হাওর এবং নন হাওর মিলে ৮৪ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগে নি¤œাঞ্চলের শতভাগ ধান শেষ হয়ে যাবে তবে উঁচু এলাকার ধান কাঁচা ও আধা পাকা থাকায় আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই হাওরের পাকা ধান দ্রুত ঘরে তুলতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরে ধান রাখার সুযোগ নেই। বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাবে। তাই বৈরী আবহাওয়ার পূর্বে ক্ষেতের ধান, খলার ধান ও খড় নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে।
উজানে বৃষ্টিপাতের শঙ্কা জানিয়ে বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ও উজানের মেঘনা অববাহিকার স্থানগুলোতে সামগ্রিকভাবে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ৬ মে পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। এতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
অপরদিকে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সভায় আগাম বন্যার কথা জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, চলতি সপ্তাহে উজানে ভারতের মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। অতিবৃষ্টিপাতে বন্যা সৃষ্টি হলেও ২০২২ সালের মতো ক্ষয়ক্ষতি হবে না। ইতোমধ্যেই হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ ফসল কেটে নিয়ে গেছেন কৃষকরা।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবশিষ্ট ধান কাটতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপজেলায় মাইকিং করে কৃষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের সময় ধান কাটার বিষয়ে তথ্য দেয়া হচ্ছে। আশা করছি, প্রতিকূল আবহাওয়ায় আর কোনো ক্ষতি হবে না। এসময় বক্তারা বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি রাখার কথা জানান। এছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং শুকনো খাবার, ও নগদ অর্থ বরাদ্দের কথা জানানো হয়।