কমলগঞ্জে স্ত্রীর গলা কে টে হ ত্যা করে থানায় স্বামীর আত্মসমর্পণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২৪, ৫:৫৪:০৯ অপরাহ্ন
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সৌদি ফেরত এক সন্তানের জননী শিল্পী বেগম (২৩) কে গলাকেটে হত্যা করেছেন স্বামী। হত্যার পর রক্তাক্ত দা নিয়ে থানায় হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন স্বামী সফর আলী। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার ১১টার দিকে উপজেলার কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কমলগঞ্জ উপজেলার বাঘমারা গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে সফর আলী পেশায় রং মিস্ত্রি। কাজ করেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। নিহত শিল্পী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার সন্দেহে শিল্পীকে হত্যা করেন পাষ- স্বামী সফর।
এর আগে শনিবার সৌদিআরব থেকে দেশে ফিরে রোববার সকালে বাঘমারার স্বামীর বাড়িতে উঠেন শিল্পী বেগম। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। উৎসুক মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সফর আলী প্রেম করে বিয়ে করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া রোডের মুক্তার মিয়ার মেয়ে শিল্পী বেগমকে। তাদের সংসারে সোহাগ নামের ৫ বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। গত ৫ মাস ধরে স্ত্রী শিল্পীর সাথে নানান বিষয়ে বনিবনা হচ্ছিলো না সফর আলীর। এমতাবস্থায় গত রোজার ৪ দিন আগে হেলাল নামের শ্রীমঙ্গলের এক দালাল মারফত এজেন্সির মাধ্যমে স্বামীর অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরব যান শিল্পী। দালাল হেলাল সম্পর্কে শিল্পীর চাচা।
বিষয়টি জানার পর স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ওই দালালকে চাপও দিচ্ছিলেন সফর আলী। স্বামীর চাপে দালাল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিটের টাকা পরিশোধ করে শিল্পীকে দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন সফর আলী। শনিবার দেশে ফিরে স্বামীর বাড়ি উঠেন শিল্পী। বাড়িতে উঠার পর স্বামী সফর আলী জানতে পারেন তাঁর স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে পাশর্^বর্তী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোলেমান হোসেন এর কাছে সফর আলী অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি তাকে ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন এর কাছে গিয়ে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন পরে বসে বিষয়টি দেখে দিবেন।
কিন্তু স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের কাছে যাননি সফর আলী। এমন কথা জানিয়ে সফর আলীর মা সরুফা বেগম জানান, পথে অন্য এক সালিশ বিচারকের কাছে গেলে ওই সালিশ ব্যক্তি সফর আলীকে বলেন, বৌ কথা না শুনলে জবাই করি দে। তারপর বাড়ি এসেই পুত্রবধূকে মারধর করে ছেলে। তবে ওই সালিশ বিচারকের নাম বলেননি সফরের মা। মারধরের এক পর্যায়ে দা দিয়ে শিল্পীকে গলা কেটে হত্যা করে সফর। পরে রক্তাক্ত দা নিয়ে কমলগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে।
থানায় পুলিশকে স্ত্রী হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা জানিয়ে বলে দালাল হেলালের সাথে অবৈধ সম্পর্কে তার স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছে। তাই, তাকে মেরে ফেলেছে। পরে কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম ও ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ও সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী এক মহিলা জানান, নিহত শিল্পীর গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গলাকেটে হত্যার আগে তাকে পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে।
নিহত শিল্পীর ছোট বোন স্বপ্না বেগম জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আপা ফোনে নির্যাতনের কথা জানায়। এরপরই খবর মিলে তাকে খুন করা হয়েছে। পাশেই বিলাপ করছিলেন শিল্পীর মা মিলন বেগম। তার কান্নায় বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, আসামি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে পাঠানো হয়েছে। গৃহবধূ শিল্পীকে গলাকেটে হত্যা করা হলেও তার শরীরে আঘাত রয়েছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাতক সফর আলীর বাবা কদ্দুস মিয়া ও মা সরুফা বেগমকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।