শাহী ঈদগাহে অস্ত্রের মহড়া ॥ চালিবন্দরে হত্যার ঘটনায় হবিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার ৪
নগরীতে ফের বেপরোয়া ‘কিশোর গ্যাং’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২৪, ৪:৪৯:০৬ অপরাহ্ন

আনাস হাবিব কলিন্স :
সিলেট নগরীতে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় চালাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম। কয়েকটি স্থানে এ গ্যাংয়ের সদস্যদের সশস্ত্র মহড়া দিতেও দেখা গেছে। তাদের অপকর্মে নগরীর বাসিন্দারা অনেকটা অসহায়।
ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নগরীর রিকাবীবাজার, শাহী ঈদগাহ, রায় হোসেন, দরগাহ গেইট, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ লাকড়িপাড়া মায়া টাওয়ার সংলগ্ন এলাকা, মনোয়ার সিএনজি পাম্পের সামনে, লামাবাজার, মির্জাজাঙ্গল, কুয়ারপার, ওসমানী মেডিকেল রোড, বাগবাড়ি, শামীমাবাদ, রিকাবীবাজার ও উপশহর এলাকা কিশোর গ্যাং সদস্যদের অন্যতম আস্তানা। ওই এলাকাগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডা বসে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই থেকে শুরু করে সব ধরণের অপরাধের সাথে জড়াচ্ছে এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাদের হাতে বিভিন্নভাবে নাজেহাল হতে হচ্ছে প্রতিবাদকারীদের। মাঝে মধ্যে র্যাব ও পুলিশের অভিযানে আলোচিত কিশোর গ্যাং সদস্য আটক হলে উৎপাত কিছুটা হ্রাস পায়। এখন ফের তাদের অপতৎপরতায় লোকজন অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিনে গত শুক্রবার সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যের অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিতে দেখা যায়। শাহী ঈদগাহের আল্লাহু চত্বর এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা কয়েক দফা সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়। তাদের অপতৎপরতায় স্থানীয় বাসিন্দারা ছিলেন অনেকটা নিরাপত্তাহীন। এমনকি শাহী ঈদগাহ এলাকায় শুক্রবার ছুটির দিনে আসা পর্যটক এবং আগন্তুকরাও ছিলেন উদ্বিগ্ন। সন্ত্রস্ত এলাকাবাসী বিষয়টি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করেন। পুলিশের টহল গাড়ি দেখে তারা সিটকে পড়ে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)-এর একটি সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর ৬ থানা এলাকাতেই কিশোর গ্যাং রয়েছে। বেপরোয়া এই কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা থামাতে একটি তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এ তালিকায় বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। কিশোর গ্যাং সদস্যদের কেউ স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে। কেউ চালাচ্ছে টমটম অটোরিক্সা, আবার কারো বাবার আছে অর্থ সম্পদ। টাকা হাতে থাকায় তারা গ্রুপ তৈরি করে দাপট দেখায়। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান করে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক সেবন, ছিনতাই, তীর জুয়া, মারামারি এসব কাজ এখন কিশোর গ্যাংয়ের মূল নেশা। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় উঠতি বয়সের কিশোরেরা সহিংসতাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আইনের আওতায় এলেও আড়ালেই থেকে যান ‘মূলহোতারা।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বহীনতার কারণেই কিশোর গ্যাং তেরি হচ্ছে। শুরুতেই কিশোর অপরাধীদের অপতৎপরতা রোধ করতে আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিনা চৌধুরী বলেন, কিশোর অপরাধ নির্মূলে অভিভাবকদের সচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে সন্তানেরা কোথায় যায় এবং অনলাইনে তারা কোন বিষয়ে যুক্ত হচ্ছে-সেটি নজরদারীতে রাখার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেন তিনি।
এসএমপি কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান পিপিএম বলেছেন, নগরীর কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে রয়েছে। তবে, এ মুহূর্তে সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি পুলিশের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ ‘জিরো টলারেন্স’ এবং বিভিন্ন এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
চালিবন্দরে হত্যার ঘটনায় ৪ কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেফতার
এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, চালিবন্দর এলাকায় কিশোর মোহাম্মদ আলী হত্যার ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানাধীন দত্তগ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার জামলাবাজ গ্রামের চাঁন মিয়ার পুত্র ফরহাদ মিয়া (২০), কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার মজলিশপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেল নূরনবী নুনু (১৯) ও একই থানার নোয়াহাটা গ্রামের নুর জামাল মিয়ার ছেলে রাহিম আহমদ (১৯) এবং হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার বগি গ্রামের জাকারিয়া মিয়ার ছেলে সাকিব আহমদ (১৯)। তারা বর্তমানে সবাই ছড়ারপারের বিভিন্ন কলোনিতে থাকেন। এদের মধ্যে ফরহাদ এ মামলার মূল আসামী। গত শুক্রবার রাতে নগরীর চালিবন্দর এলাকায় কিশোর গ্যাং এর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান কিশোর মোহাম্মদ আলী (১৭)। এ ঘটনার পরদিন শনিবার রাতে পুলিশ কিশোর গ্যাং এর ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয়েছে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি।
ফিরে দেখা: কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা
পত্রপত্রিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, গত বছরের ৭ এপ্রিল রাতে রিকাবীবাজার পয়েন্টে কিশোর গ্যাং সদস্যের ছুরিকাঘাতে আহত হন দুই ছাত্রলীগ কর্মী। এর কয়েকদিন পরেই চারাদিঘীরপাড়ে স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। র্যাবের অভিযানে আলোচিত কিশোর গ্যাং ‘জিসান গ্রুপের‘ ২ সদস্য আটক হলে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত কমে।