সুনামগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার ৮১১ টন
১২৮০ টাকা মণ দরে শুরু হচ্ছে হাওরে ধান সংগ্রহ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২৪, ১২:৪২:২৩ অপরাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ ,সুনামগঞ্জ থেকে : খাদ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে আজ ৭ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশের ন্যায় হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় একযোগে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হবে। সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভার্চুয়ালি ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গত বছরের চেয়ে এ জেলায় বেড়েছে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা। চলতি বোরো মওসুমে ধানের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এ বছর প্রায় ৩ হাজার মেট্রিকটন ধান বেশি ক্রয় করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, ছাতক, দিরাই, জামালগঞ্জ, তাহিরপুরসহ ৭ উপজেলায় ধান সংগ্রহ করবেন সংশ্লিষ্টরা। বাকি জগন্নাথপুর, শাল্লা, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলায় কৃষি বিভাগের তালিকাপ্রাপ্ত কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ধান ক্রয় করা হবে। উভয়ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে ধান বিক্রিতে ইচ্ছুক কৃষকের নাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়। ৩২ টাকা কেজি দরে মণ প্রতি ১২৮০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৩ টন ধান বিক্রি করতে পারেন একজন কৃষক এমন তথ্য জানিয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম ভুঞা।
এবার সুনামগঞ্জ জেলায় সরকারিভাবে ২৯ হাজার ৮১১ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ১৯৭৫ মেট্রিকটন, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলায় ১২৫৫ মেট্রিকটন, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ২৮৯৪ মেট্রিকটন, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২৬০৮ মেট্রিকটন, দিরাই উপজেলায় ৪৭১৮ মেট্রিকটন, শাল্লা উপজেলায় ৩৪৯৮ মেট্রিকটন, ছাতক উপজেলায় ১৮০৮ মেট্রিকটন, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৫৩৬ মেট্রিকটন, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা মিলে ৩৮৯৫ মেট্রিকটন, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৩১২৬ মেট্রিকটন, তাহিরপুর উপজেলায় ২৪৯৮ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াদের হস্তক্ষেপ ছাড়া প্রকৃত কৃষক যাতে হয়রানি ছাড়া গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন-এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে হাওর ও কৃষকের সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন। সংগঠনটির দাবি, একযোগে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও প্রতিবছর বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে প্রায় উপজেলায় বিলম্বে শুরু হয় ধান সংগ্রহ। কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াগোষ্ঠী ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে লাভবান হয়। এতে প্রকৃত কৃষকরা ধান বিক্রি করতে না পারায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে বলে অভিযোগ সংগঠনটির।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় জানান, ধান সংগ্রহ কার্যক্রম সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াদের কারণে প্রায় সময় কৃষকরা এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। কৃষক গোদামে ধান নিয়ে আসলে নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদেরকে ধান ক্রয়ে বিলম্ব করা হয়। কৃষকরা যাতে হয়রানি ছাড়া ধান বিক্রি করতে পারেন সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আন্তরিক হবেন-আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি।
তবে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াদের কোন হস্তক্ষেপ থাকবে না বলে জানিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম ভুঞা। তিনি জানান, স্বচ্ছতার সাথে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করতে কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বিক্রির আবেদন নেয়া হবে। লটারিতে নির্বাচিত হলে মোবাইলে মেসেজ যাবে। কৃষক ধান গুদামে নিয়ে আসবেন। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হবে। কাজেই এখানে মধ্যপন্থীর সুযোগ নেই। কৃষকরা যাতে নির্বিঘেœ ধান বিক্রয় করতে পারেন-সেই ক্ষেত্রে আমরা সবাই আন্তরিক।