জগন্নাথপুর-চিলাউড়া সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২৪, ২:০৭:৪০ অপরাহ্ন

কাউসার চৌধুরী :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর-চিলাউড়া সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের জন্য এখন চরম ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে থেকে গর্ত থাকা সড়কটির বহু জায়গা বাইশের বন্যায় ভেঙে সরু হয়ে যায়। আর দফায় দফায় ভেঙে সড়কে তৈরি হয়েছে ছোটো-বড় অসংখ্য গর্ত। এমন করুণ দশার মধ্য দিয়েই সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন। ভুক্তভোগী লোকজন বছরের পর বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহালেও সড়কটি সংস্কারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
জানা গেছে, প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের ইকড়ছই মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে চিলাউড়া বাজার পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ করে এলজিইডি।
জগন্নাথপুর উপজেলার ব্যস্ততম সড়কগুলোর মধ্যে জগন্নাথপুর-চিলাউড়া সড়কটি অন্যতম। এই সড়ক দিয়ে হলদিপুর-চিলাউড়া ইউনিয়ন, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ইকড়ছই, ছিলিমপুর, ভবানীপুর, যাত্রাপাশা, শেরপুর ও কবিরপুরের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার লোকজনও এই সড়ক দিয়ে শুকনো এবং বর্ষা মৌসুমে চলাচল করে থাকেন। শুকনো মৌসুমে এই সড়ক দিয়ে ভুরাখালী হয়ে সরাসরি দিরাই উপজেলা সদরের সাথে অনায়াসেই যাতায়াত করা যায়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সড়কটি ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে থাকলেও এর দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ এলজিইডি তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের ইকড়ছই মাদ্রাসার পশ্চিম থেকে জগন্নাথপুর পৌরসভার শেষ সীমানা শেরপুর পর্যন্ত পুরো সড়কটি ভেঙে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্যে ইকড়ছই, পূর্ব ভবানীপুর ও পশ্চিম ভবানীপুরের অংশে সড়কের দু’পার্শ্বের কার্পেটিং উঠে গিয়ে মাটিও সরে গেছে। এ সকল এলাকায় বড় বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় লোকজন যাতায়াত করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হন। এছাড়াও কবিরপুর, হলদিপুর, চিলাউড়া এলাকার সড়কেও তৈরি হয়েছে ছোটো বড় বহু গর্ত।
সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের ছোটো বড় এসব গর্তে পানি জমে যায়। ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে দিনের বেলায় জগন্নাথপুর বাজার থেকে রিকশা, ইজিবাইকসহ যান চালকরা যাত্রী পরিবহন করতে রাজি হননা। আবার কোনো চালক যাত্রী কিংবা মালামাল পরিবহন করতে রাজি হলেও দিতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। বর্তমানে এভাবেই স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াত করছেন।
ভুক্তভোগী লোকজন জানান, গেল ১৭ বছরে কখনো ভালো করে সড়কটির সংস্কার করা হয়নি। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো প্রলেপ দিয়েই এলজিইডি তার দায় সেরেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে কোনোমতে প্রলেপ দিয়ে সড়কটির সংস্কার করা হয়। এরপর ২০২২ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুরো সড়কটি প্রায় আড়াই থেকে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় পানির ¯্রােত। তীব্র ¯্রােতে বহু জায়গা কার্পেটিংসহ মূল সড়ক দেবে যায়। বন্যায় বিধ্বস্ত সড়কটিতে পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের কোনো দৃষ্টি পড়েনি। ফলে ভাঙাচোরা সড়ক দিনকে দিন কেবল ভেঙেই যাচ্ছে। এরই মধ্যে সড়ক দিয়ে নিয়মিত ভারি মালামাল বোঝাই ট্রলি, বালু-পাথর ও সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। সড়কটির সংস্কার দূরের কথা ইট-সুরকি দিয়ে আপাতত গর্তগুলো ভরাটের জন্যে সরকারের কোনো দপ্তর আজও এগিয়ে আসেনি।
সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন শাহনুর মিয়া। এ বিষয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি সিলেটের ডাককে বলেন, কতদিন ধরে এভাবে ঝাঁকুনি খেয়ে যাতায়াত করছি তা আর মনে নেই। আমার মতো প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এভাবে ঝাঁকুনি খেয়ে যাতায়াত করেন। কখনো কখনো ঝাঁকুনি খেয়ে রিকশা থেকে যাত্রী সড়কে পড়ে আহত হন। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলাচল করলেও আমাদের দুর্ভোগের অবসান আর হয়না। আর কত দিন এভাবে চলতে হবে তাও জানিনা। তিনি অবিলম্বে সড়ক সংস্কারের দাবি জানান।
অটোরিকশা চালক আলী হোসেন বলেন, সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় যানবাহনে প্রচন্ড ঝাঁকুনি লাগে। এতে যানবাহনের ক্ষতির পাশাপাশি শারীরিক ক্ষতিও হয়। সময় ব্যয় হয় বেশি। ইচ্ছে করে বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে। সড়কটি খারাপ হওয়ায় যানবাহন চালকরা যেতে রাজি হননা বলে জানান এই ইজিবাইক চালক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটের ডাককে বলেন, ২০২২ সালের বন্যায় সড়কটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়কটি ভালো করে সংস্কার করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়ে আসলেই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে, আপাতত সড়ক সংস্কারে আমাদের নিকট কোনো সুখবর নেই। কেবল প্রস্তাবনা অনুমোদন হয়ে আসলেই দ্রুত সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।