ফুটপাত নয়, যেন মরণফাঁদ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৪, ১২:৩০:৪৪ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম :
সিলেট নগরীর অধিকাংশ ফুটপাতের ওপরের স্ল্যাব ভেঙে গেছে। কোথাও ভেঙে দীর্ঘ ফাঁকা সৃষ্টি হয়ে ভেতরের রডগুলো বের হয়ে পড়েছে। এতে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। গত একমাসে ভাঙা স্ল্যাবে পড়ে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। বেশী ঝুঁকি থাকে কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থীদের চলাচলে। চরম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিরাপদে, নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য ফুটপাত দিয়ে চলাচলে পরামর্শ দেয়া হয়। অথচ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ সড়কের ফুটপাত ‘নিরাপদ’ এর স্থলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বলা যায়, গুটিকয়েক ফুটপাত ছাড়া বেশিরভাগের অবস্থা নাজুক। লামাবাজার এলাকার রয়েছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি মদনমোহন কলেজ। রিকাবীবাজার, লামাবাজার কিংবা জল্লারপাড় থেকে পায়ে হেঁটে এই কলেজে নির্বিঘেœ যাওয়ার সুযোগ নেই। হাঁটার সময় কিছুটা অসাবধান হলে বড় দুর্ঘটনার আশংকা বিদ্যমান । বছরের পর বছর ধরে ফুটপাতের স্ল্যাবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সড়ক দিয়ে একটু এগুলেই মাজারঘেঁষে যে ফুটপাত আছে তার অবস্থাও সুবিধাজনক নয়। অনেক স্থানে স্ল্যাব ভাঙা, কোথাও বড় ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি লামাবাজারের ফুটপাতে হোঁচট খেয়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী। আহতদের মধ্যে আট থেকে নয়টি শিশুও রয়েছে বলে জানা গেছে। এই স্ল্যাবগুলোর পরিবর্তন না করলে যেকোনো সময় বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন পথচারীরা।
গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জল্লারপাড়, মির্জাজাঙ্গাল, দাড়িয়াপাড়া, মধুশহীদ, মাছুদিঘীরপাড়, তালতলা, করিমউল্লা মার্কেট, ধোপাদিঘীরপাড়, কুমারপাড়া, সোবহানীঘাট, বারুতখানা, চৌহাট্টা, লামাবাজার সড়কের ফুটপাতের অবস্থা বেহাল। মাছুদিঘীরপাড় এলাকার ফুটপাতের স্ল্যাবগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভেঙে, ক্ষয়ে বড় বড় ফাঁকা তৈরি হয়েছে। সেই ফাঁকাগুলোতে রড বের হয়ে আছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই এই অবস্থায় রয়েছে ফুটপাতটি। অথচ ওই ভাঙা ফুটপাতের পাশেই রয়েছে ‘মেরিট হোম’ নামে শিশুদের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সকালে শিশুরা এই ফুটপাত দিয়ে হেঁটেই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। ফুটপাতের ওপর স্ল্যাবগুলো না পাল্টালে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ অপর সড়ক জিন্দাবাজার। ওই সড়ক মাড়িয়ে যেতে হয় সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে রয়েছে সরকারি কিন্ডার গার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অথচ জল্লারপাড়, মির্জাজাঙ্গল সড়কের ফুটপাতটি নিরাপদ নয়। কয়েকটি স্ল্যাব ভাঙা, এবড়ো-থেবড়ো অবস্থায় আছে বছরের পর বছর। তার মধ্যে ফুটপাতগুলো কোথাও উঁচু আবার কোথায় নিচু অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় শুধু শিশুরা নয়, বড়রা চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে।
অন্যদিকে ব্যস্ততম করিমউল্লা মার্কেট সম্মুখের সড়কের ফুটপাতের অবস্থাও করুণ। বিশেষ করে করিমউল্লা থেকে ওসমানী শিশু উদ্যান পর্যন্ত সড়কের ফুটপাতটি চলাচলের অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ স্ল্যাব মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ক্ষোভেরও শেষ নেই। আহমদ হোসেন, জলিল, তারেকসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, প্রায় প্রতিদিন রাতে এই ফুটপাতে দুর্ঘটনা ঘটে।
মির্জাজাঙ্গাল এলাকার বাসিন্দা ফারুক বলেন, অরক্ষিত স্থানে কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি সিটি কর্পোরেশন। শিশুদের পা একবার ঢুকে গেলে নিশ্চিত হাড় ভেঙে যাবার সম্ভাবনা বেশি।
কথা হয় এলাকায় আসাদ নামের এক পথচারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এই বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। অথচ তাদের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, শহরের অধিকাংশ ফুটপাত ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বিঘেœ চলাচলের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
করিম নামে অগ্রগামী স্কুল এন্ড কলেজের একজন অভিভাবক বলেন, ফুটপাতগুলো সুরক্ষিত করা উচিত। আমাদের ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ফুটপাত ধরে চলাচল করে। তিনি বলেন, সড়কগুলোর নির্দিষ্ট একটা লেভেল থাকে, কিন্তু ফুটপাতের কোনো লেভেল নেই। একে সময়, একেকভাবে যার যেমন ইচ্ছে বিন্যাস করেন। একটি সরকারি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসছে বর্ষায় যদি স্ল্যাবগুলো (ঢাকনা) স্থাপন না করা হয়, তাহলে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শহরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা পরিকল্পনা আমাদের হাতে রয়েছে। এ পরিকল্পনায় ফুটপাতও রয়েছে।