সুনামগঞ্জে বোরো ধানের খড়ে মজুদ ২০০ কোটি টাকার গোখাদ্য
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৪, ২:১৬:২০ অপরাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে : দেখার হাওর পাড়ের কৃষক আব্দুল ওয়াহিদ। তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে খড় রোদে শুকাচ্ছেন। তার দুই ছেলে দিনভর মাথায় খড় বোঝাই করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। শান্তিগঞ্জ উপজেলার উজানীগাঁও গ্রামের বর্গাচাষী ওয়াহিদের দুইটি গাভী রয়েছে। এবারের বর্ষায় আরও একটি ষাঁড় গরুর কেনার কথা রয়েছে তার। বর্ষায় গরুর খাদ্য মজুদ করে রাখতে ৫ কেয়ার জমির খড় দুই দিনে শুকিয়ে বাড়ি নিয়েছেন এই চাষী।
প্রকৃতির আশির্বাদে নির্বিঘেœ ফসল তোলার পাশপাশি গোখাদ্য সংগ্রহ করতে পারায় খুশি কৃষক ওয়াহিদ। কৃষক ওয়াহিদের মতো হাওরে কৃষকরা ধান কাটার পর খড় শুকানো, সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাওরের জাঙ্গাল বা উঁচু স্থানে রোদ্রের তাপে খড় শুকিয়ে বাড়ি নিয়ে ‘লাছি’ বা ‘ভোলা’ দিয়ে মজুদ করে রাখছেন কৃষকরা।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বোরো ধানের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবার জেলায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন খড় সংগ্রহ হয়েছে। এর বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যা দিয়ে বর্ষা মৌসুমে জেলার ৫ লক্ষাধিক গরু, মহিষ, ১ লাখ ৩৫ হাজার ভেড়া ও ৫২ হাজার ছাগলসহ ১ লক্ষাধিক অন্যান্য গবাদি পশুর খাদ্যের যোগান দেয়া সম্ভব হবে বলে জানান তারা। এটা পশু পালনে সহায়ক হওয়ায় সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে দপ্তর সংশ্লিষ্টরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, শুষ্ক মৌসুমে হাওরের গো চারণ ভূমিতে গৃহ পালিত গরু, মহিষ, ছাগলসহ অন্যান্য গবাদি পশুর খাসের সংস্থান হলেও বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলে এগুলোকে বাড়িতে আবদ্ধ রাখতে হয়। এসময় ধানের মজুদকৃত খড়ই গোখাদ্যের যোগান দিয়ে থাকে। এবার ধানের ফলনের সাথে সাথে খড়ের উৎপাদন বেশি হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। এদিকে, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর নিকটবর্তী গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, শতভাগ ধান কাটার পর বেশিরভাগ কৃষক গবাদি পশুর জন্য খড় সংগ্রহ সম্পন্ন করেছেন। বাড়ির আঙ্গিনায় আঙ্গিনায় খড়ের ‘লাছি’ বা ‘ভোলা’ (খড়ের গাদা) দেখা যাচ্ছে। সদর উপজেলার কাংলার হাওরপাড়ের গ্রাম বিরামপুর। গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান আইনুল হক বলেন, ধান কাটা শেষ। গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার তাদের গরু মহিষের জন্য খড় সংগ্রহ করে ফেলেছেন। বাড়িতে বাড়িতে খড়ের ‘লাছি’। অনেক বছর পর এবার শান্তিতে মানুষ ধান ও খড় তুলেছেন। ধানের সাথে গো খাদ্য খড় তুলতে পেরে গ্রামের ঘরে ঘরে এখন স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: রফিকুল ইসলাম, বিগত অনেক বছরে এবার মানুষ শান্তিতে ধান ও খড় ঘরে তুলতে পেরেছেন। হাওর এলাকায় এখন উৎসব বিরাজ করছে। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার ভালোভাবে খড় শুকাতে পেরেছেন তারা। খড়ের মানও ভালো বলে জানান তিনি।