মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণ
সিলেটের দাখিল-আলিম মাদ্রাসায় মানসম্মত শিক্ষকের অভাব
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মে ২০২৪, ২:৩২:৩৯ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স
সিলেটের বিভিন্ন দাখিল ও আলিম মাদ্রাসায় বিরাজ করছে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব। যে কারণে এসএসসি পরীক্ষার ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের এবারের দাখিল পরীক্ষায় খারাপ ফল করেছে এ অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
মাদ্রাসা বোর্ডের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, এবারের দাখিল পরীক্ষায় সিলেট জেলার ১৬০টি মাদ্রাসার ৮ হাজার ৯৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাশ করেছে ৬ হাজার ২২৬ জন পরীক্ষার্থী। পাশের হার ৭৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের পাশের হারের চেয়ে সিলেটের পাশের হার ২.৭৪ ভাগ কম। এবার মাদ্রাসা বোর্ডের পাশের হার শতকরা ৭৯ দশমিক ৬৬।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের মাদ্রাসাগুলোতে অনেক শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদগুলো পূরণে এনটিআরসিতে (নন গভর্নমেন্ট টিচার্স রেজিস্ট্রেশন এন্ড সার্টিফিকেশন) চাহিদা পাঠানো হলেও এসব পদ পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত ও ইংরেজি ভীতি কাজ করে। রয়েছে অভিভাবকদের অসচেতনতা। এসব ফ্যাক্টর খারাপ ফলাফলের পেছনে কাজ করেছে।
ফলাফল প্রসঙ্গে ওসমানীনগরের চাতলপাড় জামেয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল হাই আল হাদীও খারাপ ফলাফলের পেছনে মান সম্মত শিক্ষকের অভাবকে দায়ী করেন। পাশাপাশি নীচের ক্লাস মাদ্রাসায় না পড়ে স্কুল থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থীর ভর্তি হওয়া, শূন্যপদগুলোতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের শিক্ষক নিয়োগ না দেয়া এবং অভিভাবকদের অসচেতনতাও রয়েছে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাটের বারহাল আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ নেছার আহমদ বলেন, আইসিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এ কারণে কাংখিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোহাম্মদ মাহবুব হাসান জানান, বোর্ডের পক্ষ থেকে ফলাফলে দুর্বল মাদ্রাসাগুলোকে চিহ্নিত করে দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। যাতে করে ফলাফল বিপর্যয় থেকে উত্তরণ ঘটে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
৯৭ জিপিএ’র মধ্যে শাহজালাল জামেয়া পেয়েছে ৫৮টি :
সিলেট জেলায় দাখিল পরীক্ষায় এবার সবমিলিয়ে ৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের ৫৮ এবং মানবিক বিভাগের ৩৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দুই বিভাগে সবচেয়ে বেশী ৫৮টি জিপিএ-৫ পেয়েছে শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা। এর মধ্যে ৫১ জনই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বাকি ৭ জন মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। জকিগঞ্জের বাদে দেওরাইল ফুলতলি কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মানবিক বিভাগে ১০টি জিপিএ-৫ পেয়ে শীর্ষে রয়েছে।
শতভাগ ফলাফল অর্জন করেছে তিনটি প্রতিষ্ঠান :
এবার সিলেটের তিনটি প্রতিষ্ঠান শতভাগ ফলাফল অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-গোয়াইনঘাটের পিয়াইনগুল জামেয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, কানাইঘাটের আল হেরা দাখিল মাদ্রাসা ও গোলাপগঞ্জের ফুলসাইন্দ দারুল কেরাত দাখিল মাদ্রাসা।
পরীক্ষা হয় ১৭টি কেন্দ্রে :
সিলেট জেলার ১৭টি কেন্দ্রের মধ্যে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১৪টি মাদ্রাসা, জামেয়া রাহমানিয়া তায়িদুল ইসলাম ফতেহপুর মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৭টি, দক্ষিণ সুরমার জালালিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১২টি, জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১০টি, ইছামতি দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১১টি, বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১০টি, সৎপুর কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৬টি, বালাগঞ্জের ইসলামিয়া মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৬টি, বিয়ানীবাজার কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৭টি, মাথিউড়া সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৭টি, কানাইঘাট মনসুরিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১৩টি, ফেঞ্চুগঞ্জ মোহাম্মদিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৭টি, গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর মডেল কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২৩টি, জৈন্তাপুর দারুছুন্নাহ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৪টি, গোয়াইনঘাট দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৯টি, কোম্পানীগঞ্জের কাঠালবাড়ি চৌমুহনী দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৪টি এবং ওসমানীনগরের হযরত শাহজালাল র. ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১০টি মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীরা দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়।
প্রসঙ্গত গত ১২ মে এসএসসি ও সমমানের দাখিলসহ মোট ১০টি বোর্ডের ফল প্রকাশিত হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ২০৬ জন শিক্ষার্থী।