প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বাগান মালিকরা
নানা সংকটে ভুগছে সিলেটের চা শিল্প
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২৪, ৭:২৮:৩১ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের অন্যতম শিল্প চা। তবে বর্তমানে এই শিল্প নানা রকম সংকটে ভুগছে। চা শিল্পের চলমান সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। এজন্য বাগান মালিকরা চা শিল্পের সংকট উত্তরণে নানা দাবি দাওয়া নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান এর কাছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
একইভাবে মৌলভীবাজারের বাগান মালিকদের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. ঊর্মি বিনতে সালাম এর কাছে অনুরূপ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়
স্মারকলিপির লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে সিলেটের নেতৃবৃন্দরা জানান, চা শিল্পের সাথে জাতির পিতা, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর দিকনির্দেশনা ও অপরিসীম অবদানকে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে চা শিল্প, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে যে অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তা থেকে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই সেই সংকট থেকে উদ্ধার পেয়েছিল।
তারা বলেন, বর্তমানে চায়ের নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় চা শিল্পের ভিত নড়ে গেছে। অথচ কয়েক লক্ষ শ্রমিক এবং কর্মচারী তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রায় দুইশত বছরের এই ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় অনেক বাগান শ্রমিকদের মজুরী দিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যমান সমস্যাবলীর সমাধানকল্পে বাগান মালিকরা হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সমস্যাগুলোর বর্ণনা করতে গিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে চায়ের উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫০ টাকা। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চা বোর্ড, বাংলাদেশীয় চা সংসদ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশনের সমন্বয়ে চায়ের নিলামমূল্য নিম্নতম ৩শ টাকা নির্ধারণ করলে চা শিল্প আপাতত রক্ষা পেতে পারে। নিম্নতম মূল্যের উপরে চায়ের মান অনুযায়ী নিলাম মূল্য নির্ধারিত হতে পারে। চায়ের চোরাচালালান রোধ করতে হবে।
পঞ্চগড়ের চা আমাদের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করলেও দুঃখজনক হলেও সত্য, ওখানে চা উৎপাদনের কোন নিয়মনীতি না মেনে খুবই নিম্নমানের চা উৎপাদিত হচ্ছে। ফ্যাক্টরি থেকে কোন ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধ না করে অবৈধভাবে চা বিক্রি হচ্ছে। এই নিম্নমানের চা বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানসম্মত চায়ের নিলাম বাজারে যথাযথ মূল্য পাওয়াতে বাধার সৃষ্টি করছে।
ছোট-বড় প্রায় সব বাগানই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে হাইপোথেটিক ঋণ নিয়ে থাকে এবং চায়ের নিলাম মূল্য সরাসরি কৃষি ব্যাংকে জমা হয়ে তা পরিশোধ করা হয়। এই ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% থেকে বর্তমানে ১৩% করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় তা পরিশোধ করা বাগানগুলোর পক্ষে অসম্ভব। বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% রাখার জন্য এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমার ব্যাপারে শিথিলনীতি গ্রহণ, রুগ্ন ও উন্নয়নশীল চা বাগানকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা।
চা বোর্ডের বাধ্যতামূলক ২.৫% সম্প্রসারণ আবাদ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূরণ করার উপর জোর দেয়া। বর্তমানে বাগানগুলোর হাতে সম্প্রসারণ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত তহবিলও নেই। তাই এই সম্প্রসারণ কার্যক্রম কয়েক বছরের জন্য স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূর্ণ করে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দিকনির্দেশনা চান।
ঘন ঘন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে ফ্যাক্টরিতে সবুজ কাঁচা চা পাতা (যা পচনশীল) প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে চায়ের মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। চা ফ্যাক্টরিগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।।
চা শিল্পের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় চা শিল্পকে ভ্যাট ও ট্যাক্স থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানান। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চা আমদানির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এমতাবস্থায় চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমদানির উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে চা আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণসহ চা শিল্প বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন বাগান মালিকরা।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন নিনা আফজাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ (খাদিম চা বাগান) ও বালিসিরা হিল টি কো লিঃ (জঙ্গলবাড়ি চা বাগান) এর আফজাল রশিদ চৌধুরী, দি সিলেট টি কোঃ লিঃ (মালিনিছড়া চা বাগান), দি দলই টি কোঃ লিঃ (দলই চা বাগান) ও রাজনগর টি কোঃ লিঃ (রাজনগর চা বাগান) এর দানবীর ড. রাগীব আলীর পক্ষে মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আজম আলী, এম আহমেদ টি এন্ড ল্যান্ডস কোঃ লিঃ, চাঁনভাগ চা বাগান, আমীনাবাদ চা বাগান, হাবিবনগর চা বাগান, খান চা বাগান, লালাখাল চা বাগান, আফিফানগর চা বাগানের তেহসিন চৌধুরী, ফুলবাড়ী টি এস্টেট লিঃ, ফুলবাড়ী চা বাগান ও নুরজাহান চা বাগানের তেহসিন চৌধুরী,
বুরজান টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ (বুরজান চা বাগান), দি নিউ সিলেট টি এস্টেট লিঃ (ফুলতলা চা বাগান) এর আব্দুস সবুর খান, ম্যাকসন ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিঃ, হাফিজ চা বাগান ও আয়েশাবাগ চা বাগানের এম এ জামান সোহেল, মাথিউরা টি কোঃ লিঃ (মাথিউরা চা বাগান), তাজ টি এন্ড ট্রেডিং কোঃ লিঃ (মোমিনছড়া চা বাগান) এর রুকন উদ্দিন খান, কালিকাবাড়ি চা বাগানের মুফতি মোহাম্মদ হাসান, জোবেদা টি কোঃ লিঃ (কালিটি চা বাগান)এর এম এ মালিক হুমায়ুন, পূর্ব পাহাড় টি কোঃ লিঃ (রেহানা চা বাগান) এর প্রফেসর শফিকুল বারি, লোভাছড়া চা বাগানের ইউসুফ জোসেফ ফারগুসন, আল্লাদাদ চা বাগানের ইফজাল চৌধুরী, মেঘালয় চা বাগানের এম এ ওয়াকিল খান. তারাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী ।
অনুরূপভাবে চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের বাগান মালিকদের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন মৌলভীবাজার চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী বরাবর মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. ঊর্মি বিনতে সালাম এর মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।