টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢল
সিলেট ও মৌলভীবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মে ২০২৪, ৪:২৯:৩৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রেমেলের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একই সঙ্গে সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, ধলাই ও সারিসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। প্লাবিত হয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও মৌলভীবাজারের নিম্নাঞ্চল। বিভিন্ন ঘর বাড়িতে পানি উঠারও খবর পাওয়া গেছে। প্লাবিত এলাকা থেকে পাঠানো প্রতিনিধিদের রিপোর্ট।
গোয়াইনঘাট থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চল ও হাওরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়তে শুরু করেছে উপজেলার বিভিন্ন নদ- নদীর পানি। পিয়াইন,সারী গোয়াইন নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায় নি। দমদমা গ্রামের লিল মিয়া জানান, গত কয়েক দিন ধরে তীব্র তাপদাহে (গরমে) অতিষ্ঠ ছিল জনজীবন। আকস্মিক দুই দিনের মুষলধারে বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি বাড়ির চারপাশে পানি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাবে।
জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ( ওসি) মোঃ রতন শেখ জানান, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পিয়াইন নদী টুইটুম্বুরে পরিণত হয়েছে। জাফলংয় পর্যটন কেন্দ্রর নিচু স্থানের দোকানঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, উপজেলার ১৩ নং বিছনাকান্দি ইউনিয়নের ঝারিখালকান্দি, দমদমা, পাতনিকোনা, বগাইয়া হাওর, হাদারবিল গ্রামের নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে নিচু এলাকার কিছু রাস্তা, মাঠঘাট ও গো-চারণ ভূমি তলিয়ে গেছে। উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের হাওরাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পূর্ব জাফলং, পূর্ব আলীরগাঁও ও পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওর ঢলের পানিতে নিম্নজ্জিত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তৌহিদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়” রেমাল” এর প্রভাবে গোয়াইনঘাট উপজেলার কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ- নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে গোয়াইনঘাট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
জৈন্তাপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টানা বর্ষন ও উজান হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জৈন্তাপুরে উপজেলা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে অনেকের ঘর বাড়ি তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল, মযনাহাটি, বন্দরহাটি, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ডিবিরহাওর, ফুলবাড়ী, টিপরাখরা, খলারবন্দ, মাঝেরবিল, হর্নি, নয়াবাড়ী, কালিঞ্জিদবাড়ী, জৈন্তাপুর ইউনিয়নে লামনীগ্রাম, মোয়াখাই, বিরাইমারা, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, লক্ষ্মপুর, কেন্দ্রী, খারুবিল, নলজুরী, শেওলারটুক, বাওনহাওর, চারিকাটা ইউনিয়নের লাল, থুবাং, উত্তর বাউরভাগ সহ বিভিন্ন গ্রামে পানি উঠেছে।
অপরদিকে উপজেলার সবচাইতে বড় নদী সারী, বড়গাং, নয়াগাং ও রাংপানি নদীর বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে।
ডিবিরহাওর গ্রামের বাসিন্দা মাসুক আহমদ বলেন, পাহাড়ি ঢলে এবং অতিবৃষ্টির কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই বন্যার পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। বৃষ্টি থামলে পানি নেমে যাবে।
এদিকে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে জানানো হয়, টানা বৃষ্টির কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টি থামলে দ্রুত পানি নেমে যাবে।
মৌলভীবাজার থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে টানা ২ দিনের বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে জেলার প্রধান দুই নদী মনু ও ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উত্তাল অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সে: মি: উপর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে এবং মনু নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার কমলগঞ্জ পৌরসভায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের খনন করা খাল দিয়ে কিছু পানি পৌর শহরের লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। পাশাপাশি হাকালুকি ও কাউয়াদীঘী হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত জেলার কোথাও বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাবেদ ইকবাল বলেন, এখন পর্যন্ত পানি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। আশা করা যায়, বৃষ্টি থেমে গেলে পানি নেমে যাবে। কুশিয়ারার পানি অনেক নিচে থাকায় আমরা অনেকটা আশঙ্কামুক্ত।
এদিকে কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কমলগঞ্জে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধলাই নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। পানি বিপদসীমার ১১ সে:মি: উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ১০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ এলাকার মসজিদের ২০০ গজ উত্তরে প্রায় ১০ ফুট প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে নারায়নপুর, চৈতন্যগঞ্জ, বাঁধে উবাহাটা সহ কয়েকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, গতকাল দুপুর ২টায় ভানুগাছ রেলওয়ে সেতু এলাকায় ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১টি স্থানে ভাঙনের কথা স্বীকার করে বলেন, নদীতে পানি বাড়ছে। প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজ হওয়ায় আপাতত ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। তারপরও উপজেলা প্রশাসন ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের দিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে।