উজানের ঢলে সিলেটের তিন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মে ২০২৪, ৬:৩৭:৪২ অপরাহ্ন

অনলাইন ডেস্ক : দুইদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের প্রায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বেড়েছে। বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সিলেট জুড়ে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, প্রাক বর্ষাকালে সুরমা নদীর কানাইঘাট এলাকার বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার থাকলেও আজ বুধবার (২৯ মে) সকাল নয়টায় সেখানে পানির লেভেল দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার।
সিলেটে সুরমার বিপৎসীমা ০৮ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার হলেও সকাল নয়টায় ছিল ৯ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। আমলশিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানির বিপৎসীমা হচ্ছে ১৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার হলেও আজ সকাল নয়টায় ছিল ১৫ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদী শেওলা এলাকার বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। সকাল নয়টায় ছিল ১১ দশমিক ৬৬ সেন্টিমিটার।
সারি গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার হলেও আজ সকাল নয়টায় ১১ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল। সারিগোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা হলো ০৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে আজ সকাল নয়টায় ছিল ৯ দশমিক ৭৩ সেন্টিমিটার।
সিলেটের জৈন্তাপুরে দ্বিতীয় দিনে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারী, বড় নয়াগং ও রাংপানি নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বিপদ সীমার উপর দিযে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত আব্যহত থাকায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা যায়, পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। এছাড়া বন্যায় পরিস্থিতির খোঁজ রাখছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেল, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১নম্বর লক্ষ্মীপুর, ২নম্বর লক্ষীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, কাঠালবাড়ী, নলজুরী, কেন্দ্রী, থুবাং, কালিঞ্জি, লালা, তুমইর, শেওলারটুক, বাওন হাওর সহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা সর্ববৃহৎ সারী, বড় নয়াগাং ও রাংপানি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দশমিক ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা ও পাহাড়ী ঢলে পানি আরও বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, পাহাড়ি ঢল টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমরা বন্যার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং নিম্নাঞ্চলের জনসাধারণ কে নিরাপদ আশ্রয়ে গবাদী পশু সরিয়ে আনতে বলা হয়েছে। এছাড়া জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলও পানিতে ডুবেছে। সারিঘাট-গোয়াইনঘাট সড়কের দু’টি পয়েন্টে যথাক্রমে গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলা পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘আমাদের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায় মূলত উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আমাদের দেশে তো বৃষ্টিপাত ছিলই। তাছাড়া প্রাক বর্ষাকালে বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। আর বৃষ্টি হলে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়াটাও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শুষ্ক মৌসুমের হিসেবে সিলেটে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে। এই পানি আরেকটু বৃদ্ধি পাবে। তারপর নেমে যাবে। তবে যেহেতু আমাদের দেশে বৃষ্টি হচ্ছে না, তাই এখন কিছুটা স্বস্তি আছে। এখন যদি ভারতে বৃষ্টি হয় তাহলে তো পাহাড়ি ঢল আসবেই। এজন্য আমাদেরকে প্রাক বর্ষাকাল ও বর্ষাকালে সবসময় বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।’