সিলেটে তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন
৪টিতে নতুন মুখ, ৬টিতে পুরনো নির্বাচিত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২৪, ৭:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে সিলেট বিভাগের ১০টি উপজেলার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৪টিতে নতুন মুখ ও ৬টিতে সাবেকরাই নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম পল্লব, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোকাব্বিরুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মুশফিউল আলম আজাদ এবং শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন।
অরপদিকে, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় আশফাকুল ইসলাম শাব্বির, বালাগঞ্জ উপজেলায় আনহার মিয়া, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় রফিকুল ইসলাম কিরণ, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল নির্বাচিত হয়েছেন। প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এবং বিএনপিসহ তাদের শরিকরা না থাকায় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল।
বিয়ানীবাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পরাজিত করে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মো. আবুল কাশেম পল্লব। তিনি হেলিকপ্টার প্রতীকে ২০ হাজার ১৯৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ গৌছ উদ্দিন শালিক প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৬০ ভোট। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান (টেলিফোন) ৪ হাজার ৯৫৭ ভোট এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মকসুদুল ইসলাম (মোটসাইকেল) পেয়েছেন ১৬ হাজার ১১ ভোট।
বালাগঞ্জে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুরকে পরাজিত করে নতুন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়া।
বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা মো. জিল্লুর রহমান জিলু জানান, নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েই চমক দেখিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালজুড় ইউনিয়ন পরিষদের ৪ বারের চেয়ারম্যান আনহার মিয়া। তিনি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মফুরকে প্রায় আড়াই হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।
চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী আনহার মিয়া আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ২১ হাজার ৩৩৮ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাকুর রহমান মফুর কাপপিরিচ প্রতীকে পেয়েছেন ১৯ হাজার ২৯৩ ভোট। এছাড়া নির্বাচনে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সামস উদ্দিন সামস ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ১৩৯ ভোট। এদিকে বালাগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ৫জন প্রার্থীর মধ্যে জয়লাভ করেছেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও খেলাফত মজলিস নেতা মাওলানা সৈয়দ আলী আছগর (বৈদ্যুতিক বাল্ব)। তিনি পেয়েছেন ১৬ হাজার ২২১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ মো. জাকারিয়া জাবের (টিউবওয়েল) পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫৭০ ভোট। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে মোস্তাক উদ্দিন আহমদ (চশমা) ৭ হাজার ৭৯৯ ভোট, নুরে আলম (মাইক) ২ হাজার ৯৬ ভোট এবং মোশাহিদ আলী (তালা) ২ হাজার ৩৮ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সেবু আক্তার মনি (ফুটবল) ২৮ হাজার ৫৯১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী অপর্ণা রাণী দেব (কলস) পেয়েছেন ১৫ হাজার ১২৪ ভোট।
ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা তাজুল ইসলাম জানান, ফেঞ্চুগঞ্জে তরুণ প্রার্থী আশফাকুল ইসলাম শাব্বির উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। আনারস প্রতীকে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আশফাকুল ইসলাম শাব্বির পেয়েছেন ১২ হাজার ১৯৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাপ পিরিছ প্রতিকে মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭৭ ভোট। রাত ৯ টায় ফেঞ্চুগঞ্জ সহকারী রিটার্নিং অফিসার মাহবুব আলম বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। মাইক প্রতীকে বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ১৪ হাজার ৮৩১ ভোট ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টিউবওয়েল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৭১ ভোট।
সুনামগঞ্জ (ছাতক) থেকে বদরউদ্দিন বদর ও সৈয়দ হারুন আর রশিদ জানান, ছাতক উপজেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন রফিকুল ইসলাম কিরণ। তিনি কাপপিরিচ প্রতীকে ৪০ হাজার ৩২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন । তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওলাদ আলী রেজা আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৩৪৪ ভোট। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে কাজী আব্দুস সামাদ চশমা প্রতীকে ৪৩ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইজাজুল হক রনি পেয়েছেন ১১ হাজার ১৪১ ভোট। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন লিপি বেগম।
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা তাজুল ইসলাম জানান, দোয়ারাবাজারে পুনরায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী। তিনি আনারস প্রতীকে ২৫ হাজার ৬৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির বহিস্কৃত নেতা ও বগুলা বাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম (দোয়াত কলম) পেয়েছেন ২১ হাজার ২২৯ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন মো. আবু বকর সিদ্দিক (বৈদ্যুতিক বাল্ব)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মো. বশির আহমদ (চশমা)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন মোছা: শিরিনা বেগম (হাঁস)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বেগম শামসুন নাহার (ফুটবল)।
কমলগঞ্জ(মৌলভীবাজার) থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা সুব্রত দেব রায় সঞ্জয় জানান, কমলগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কৃষি মন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এর ছোট ভাই কমলগঞ্জ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল (মোটরসাইকেল) ৪৬ হাজার ৬৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান (আনারস) ৩০ হাজার ৭১২ ভোট পেয়েছেন। ৩য় হয়েছেন গীতা রানী কানু (ঘোড়া) পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩২ ভোট।
এদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোঃ আব্দুল ওহাব (বৈদ্যুতিক বাল্ব) ৩৯ হাজার ৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নিরঞ্জন দেব (মাইক) পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯৬১ ভোট। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী (চশমা) ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট, মোঃ সিদ্দেক আলী (তালা) ৮ হাজার ৩২৯ ভোট এবং সুনীল কুমার মৃধা (টিউবওয়েল) পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৫ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম (পদ্মফুল) ৪১ হাজার ৬ ৪৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মুন্না দেব রায় (ফুটবল) প্রতীক ভোট পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৯শ ৮১ ভোট।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা আব্দুল হাই ডন জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভানু লাল রায় বেসরকারীভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কাপ-প্লেট প্রতীকে তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৪২ হাজার ৬৬৯। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আছকির মিয়া মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৭৬ ভোট। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক রাজু দেব রিটন। তিনি তালা প্রতীক নিয়ে মোট ভোট পান ৫৮ হাজার ৭৬০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ লিটন আহমেদ টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ভোট পান ২০ হাজার ৯৯২ ভোট। এদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন হাজেরা খাতুন। তিনি হাঁস মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৫০ হাজার ৭৩৩। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিতালী দত্ত ৩৪ হাজার ৫০১ ভোট পান।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন মোকাব্বিরুল ইসলাম। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান ও হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি। আনরস প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৪১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামিম কাপপিরিচ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৭১৫ ভোট।
লাখাই (হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা রফিকুল ইসলাম জানান, লাখাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের মো. মুশফিউল আলম আজাদ। কৈ মাছ প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৩২ হাজার ৯২২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ৪৪৫ ভোট। এছাড়া ইকরামুল মজিদ চৌধুরী(ঘোড়া) পেয়েছেন ৭ হাজার ৪৬ ভোট এবং মো. আমিরুল ইসলাম(আনারস) পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৪৮ ভোট।
শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা মোঃ ফিরুজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল মটর সাইকেল প্রতীকে ১৫ হাজার ৩০০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান মাসুক ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৫৯ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আ স ম আফজাল আলী টিয়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০ হাজার ৪৫১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চশমা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৮৮ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মমতাজ বেগম ডলি প্রজাপতি প্রতীকে ১৪ হাজার ২৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রুবিনা আক্তার রুবি ভোট পেয়েছেন ১০ হাজার ২৪৮।