৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, পানি উঠেছে নগরীর তালতলায়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০২৪, ৩:০৪:৫৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: আকস্মিক বন্যায় সিলেটের ৫টি উপজেলার ৩৬ টি ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পরিস্থিতির অবনতি হলেও বিকেলের দিকে উন্নতি হতে থাকে। তবে এখনো বানভাসি লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রেই অবস্থান করছেন। উজানে বৃষ্টিপাত না হলে আজ শুক্রবার পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে সিলেটের নদ নদীর সবকটা পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বানভাসি লোকজনকে স্থানীয়দের সহায়তায় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। সুরমা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নগরীর তালতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠার খবর পাওয়া গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মেডিকেল টিমও গঠন করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান গতকাল জৈন্তাপুরে বন্যার্তদের মধ্যে রান্না করা খাবার ও পানি বিতরণ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ধীরে ধীরে উজানের ঢল নেমে গিয়ে অন্য জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও পানি বাড়ছে। প্রশাসনসহ সামাজিক ও ব্যক্তি উদ্যোগে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রমতে, জেলার গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। এখানকার বেশিরভাগ এলাকার ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের ঘরের ভিতরে কোমর সমান পানি আবার অনেকের ঘর একেবারে ডুবে গেছে। প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে পানি উঠে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মানুষজন কোথাও বের হতে পারছেন না। নষ্ট হচ্ছে ঘরবাড়ির মালামাল। অনেকে ঘরের মালামাল ও গবাদি পশু রেখে আশ্রয়কেন্দ্রেও যাচ্ছেন না। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়াতে রান্নাবান্নারও সুযোগ নেই। নেই শুকনো খাবারও। মানুষের বাড়িঘরে দ্রুত পানি ঢুকে পড়ায় অনেক মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। পর্যাপ্ত নৌকার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বেগ পোহাতে হয় বানবাসীদের। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে পানি কমতে শুরু হলেও সিলেট সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বাড়ছে।
অন্যদিকে বুধবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলায় অনেকের ঘরবাড়ি ডুবে এক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে। যার কারণে মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইলে মধ্যরাতে পর্যাপ্ত নৌকার অভাবে যেতে পারেননি। পরে সকালে অনেকে যান। আর গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ এলাকার মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন।
জকিগঞ্জ থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদতাতা জানান, জকিগঞ্জে ভারতের বরাক নদী দিয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর কয়েকটি স্থানে ডাইক ভেঙে ৪টি ইউনিয়নের অন্তত ৪০/৫০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সেখানে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে এবং মানুষজনও সেখানে অবস্থান করছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য মাওলানা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও বানভাসি মানুষকে দেখতে গেছেন। এসময় তিনি আর্থিক সহযোগিতাও করেন।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসলিম জানান, সকাল থেকেই পানি বাড়ছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। কুশিয়ারার অমলসীদ পয়েন্টে কাল থেকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার্তদের জন্য ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে এবং ২০-২৫ টি পরিবার সেখানে উঠেছেন।
এদিকে, প্রায় চারদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এ কারণে কোথাও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলেও মোবাইল ফোনে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের জানাতে পারছেন না এলাকাবাসী। মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে গ্রাম এলাকার সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে, বিদ্যুতের দাবিতে বুধবার রাতে উপজেলার বারঠাকুরীতে সড়ক অবরোধ করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. মোতাছিম বিল্লাহ’র সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
কানাইঘাট থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সুরমা ও লোভা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় সুরমা ডাইক ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করার কারণে উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম, দিঘীরপাড় পূর্ব, বড়চতুল, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার সমস্ত জনপদ, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শত শত বাড়ি-ঘর হাঁটুপানি থেকে কোমর পানি বিরাজ করছে। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে।
জানা যায়, বুধবার রাত ৯টার পর থেকে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গভীর রাতে ঢালাইচর, গৌরিপুর, কুওরঘড়ি, উত্তর লক্ষ্মীপ্রসাদ, দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রসাদ, বোভারহাওর সুরমা ভাইকের বিভিন্ন স্থান সহ কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা ডাইকে বড় ভাঙন সহ নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা ভেঙে পানি দ্রুত বেগে লোকালয়ে প্রবেশ শুরু করে। গভীর রাতে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে বাড়ি-ঘর থেকে সরিয়ে আনার জন্য মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হয়।
অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য। মনিটরিং সেল খুলে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানের জন্য প্রচার করা হয়।
বুধবার রাত থেকে পানবন্দি অবস্থায় থাকা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির লোকজন নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় চড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে থাকেন। কয়েক’শ নারী-পুরুষ, শিশু, স্থানীয় স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান নিয়েছেন। পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে কানাইঘাট-দরবস্ত সড়ক, গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইকানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক ও কানাইঘাট-শাহবাগ।সড়কের নিচু এলাকা দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সিলেটের সাথে উপজোলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
লোকালয় সহ বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক মৎস্য খামার ও সবজি বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৮টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষজন উঠেছেন। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে, অবস্থা ততই বেহাল হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বন্যার পানি বিকেলে দিকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে। দিনভর মানুষের মধ্যে আশ্রয়ের আকুতি ছিল। অবশ্য সার্বিক তৎপরতায় মানুষের মাঝে স্বস্তি নেমে আসে। ঢলের পানিতে সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৭০ ভাগের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ২৬ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৫৬ জন মানুষ ও ৬৪৫ টি গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে। ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর আবাদি জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত। ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মোট ৪২ হাজার ৯০০ টি পরিবারের ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ জন মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন।
জৈন্তাপুর থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বুধবার রাতে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও দিনে তৎপরতায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। দিনভর আটকেপড়া লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, রাতের অবস্থা ছিল খুবই ভয়াবহ। এখন দিনে পানি একটু কমতে শুরু করলেও বৃষ্টি শুরু হয়। মূলত থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে পানি ধীর গতিতে নামছিলো। উপজেলার বানভাসি মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপশি নিকটস্থ আত্মীয়-স্বজনের নিরাপদ উঁচু স্থাপনাতেও আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা যতটা সম্ভব সব জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। জেলা থেকে পাওয়া ত্রাণ ছাড়াও আমরা ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গা থেকে ত্রাণ এনে সকল মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ মাঠ, থানা রোড ও থানা কম্পাউন্ড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ধলাই ও পিয়াইন নদীর পানি উপচে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তলিয়ে গেছে উপজেলার ফসলি জমি ও মাছের খামার। বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। উপজেলার সর্বত্র গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টিটু কুমার দে বলেন, উপজেলার অধিকাংশ স্কুলের মাঠে পানি ঢুকেছে। এ কারণে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব কম ছিল। কয়েকটি স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, বন্যায় ৪৪৯ হেক্টর সবজি ও ৭০ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
এদিকে, অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্বারা সম্মানিত পর্যটকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পর্যটন কেন্দ্রসমূহ পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাদাপাথর পর্যটন ঘাটসহ সকল পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মানুষজনের জন্য ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১০০টি নৌকা উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের জন্য প্রস্তুত আছে। আমরা মাইকিংও করেছি। কারো আশ্রকেন্দ্রে আসতে অসুবিধা হলে আমাদের ভলান্টিয়াররা গিয়ে আনবেন।
এদিকে জেলার ৫ টি উপজেলায় (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) সমহারে ২০০ বস্তা করে ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিলেট জেলায় মোট ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তন্মধ্যে গোয়াইনঘাট ৫৬টি, জৈন্তাপুর ৪৮টি, কানাইঘাট ১৮টি, কোম্পানীগঞ্জ ৩৫টি ও জকিগঞ্জ ৫৮টি। বলে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (গোপনীয় শাখা, আইসিটি শাখা) মো. ওমর সানী আকন এই তথ্য জানিয়েছেন।
অপরদিকে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী। প্রয়োজন হলেই তারা তৎপরতা শুরু করবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে, কানাইঘাটে সুরমা বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার, আমলসীদে কুশিয়ারা বিপদসীমার ২১৩ সেন্টিমিটার, শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, গত সোমবার সিলেটে ২৪৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, মঙ্গলবার ১৪৬ দশমিক ১ মিলিমিটার এবং বুধবার ২৪ ঘণ্টায় ১৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
চলতি মৌসুমে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২২ সালে মে মাসে সিলেটে রেকর্ড করা বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৮৩৯ মিলিমিটার, ২০২৩ সালের মে মাসে ছিল ৩৩০ মিলিমিটার এবং ২০২৪ মে মাসের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রেকর্ড করা বৃষ্টির পরিমাণ ৭০৫ মিলিমিটার।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ১৩১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী। তিনি বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। দেড় লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ২ লাখ ২০ হাজার এন্টিভেনম ইনজেকশন, পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও কলেরা স্যালাইন মজুদ রয়েছে।”
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসনও। জনগণের আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন বলেন, জেলা ও উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রয়োজনে উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নেবে সেনাবাহিনী।