১০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ ॥ জানিয়েছে সিসিক
নগরীর বাসাবাড়িতে সুরমার পানি ঢুকে দুর্ভোগ-ভোগান্তি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০২৪, ৩:০৮:৫৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা বৃষ্টিপাতে গতকাল সোমবার তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিলো সিলেট নগরীতে। সুরমার তীর সংলগ্ন এলাকাগুলো হয়ে গিয়েছিলো জলমগ্ন। শাহজালাল উপশহরে রাস্তায় চলেছে নৌকা। সিলেট বিভাগের প্রধানতম চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। এ মেডিকেলের গতকাল সোমবারের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে হাসপাতালের নিচতলার তিনটি ওয়ার্ডে পানি জমে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন রোগী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নগরবাসীরও দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। সিলেটের নদ-নদীগুলো রোববার বিপদসীমার নিচে নামলেও সোমবার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। অন্যদিকে, সুনামগঞ্জেও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। সিলেটে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, নগরীর ১০ হাজার পরিবার বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি প্লাবিত হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে স্থানীয় কাউন্সিলর মাধ্যমে বন্যায় আক্রান্তদের মাঝে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে আগামী দুই দিন অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের বা ভারি বৃষ্টি হতে পারে। তিনি জানান, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২২৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৯.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে দুটি নদীর পানি চারটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে অবস্থান করছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাটে সুরমা বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার, সিলেটে ১ সেন্টিমিটার, আমলসীদে কুশিয়ারা ৪০ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জে ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভারি বর্ষণের কারণে সোমবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমা বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকাল থেকে পানি কিছুটা কমতে থাকে। এদিন সন্ধ্যা ৬টায় শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অপরদিকে, বৃষ্টির পানি সিলেট নগরের ছড়াগুলো দিয়ে নদীতে মিশতে না পারায় নগরের বিভিন্ন স্থান জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরীর মিরের ময়দান, দরগা মহল্লা, মিরাবাজার, তালতলা, মাছুদিঘীরপার, জামতলা, তোপখানা, কাজিরবাজার, যতরপুর, তেররতন, উপশহর, সোবহানীঘাট, শেখঘাট, লালদীঘির পাড়, শামীামাবাদ আবাসিক এলাকাসহ অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে, নগরীতে বন্যার পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়া ও নির্ঘুম রাত কাটানো নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সিলেটের সুরমা নদী এবং নদীর পাশের ছড়া ও খাল খননের দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে রোববার সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। বেশ কিছু স্থানে কমে এসেছিল পানি। কিন্তু রাতে বৃষ্টিতে ফের নগরীতে পানি বেড়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, বৃষ্টি আর পানি সুরমা ধারণ করতে পারছে না, যার জন্য এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, সিসিক কর্মচারীরা ছড়া, নালা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত রয়েছে। এটা প্রাকৃতিক কারণে হয়েছে। আমরা নগরবাসীর পাশে রয়েছি।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেটে দুটি নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তবে অন্য নদ-নদীর পানি সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত বিপদসীমার নিচে অবস্থান করছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে পানিও কমে আসবে বলে জানান তিনি
সিসিক সূত্র জানায়, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে নগরীর ছড়া-খাল ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে নি¤œাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। নগরীতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ১৫নং ওয়ার্ডে কিশোরী মোহন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, রামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়, বসন্ত মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, মওদুদ আহমদের বাসায় আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। ১৩নং ওয়ার্ডে মির্জাজাঙ্গাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ২৪নং ওয়ার্ডে তেররতন স্কুল, ওমর শাহ স্কুল ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাসিটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউসেপ ঘাসিটুলা স্কুল, জালালাবাদ মডেল স্কুল, মঈনুদ্দিন মহিলা কলেজ, কানিশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কাউন্সিলর তাদের নিজ বাস ভবনে পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয় প্রদান করছেন। ইতোমধ্যে মহানগরীতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, কাউন্সিলরদের দেয়া তথ্যমতে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রোস্টার ডিউটি পালন করবেন সিসিকের কর্মকর্তাগণ। জরুরি সেবায় কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের ফোন নম্বর (০১৯৫৮২৮৪৮০০) ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে।