দিরাইয়ে ভূমি অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্যে অসহায় সাধারণ মানুষ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২৪, ৮:৫৯:৩৯ অপরাহ্ন
উবাইদুল হক, দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে : দিরাইয়ে ভূমি অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীর মতো চেয়ার টেবিল নিয়ে অফিসের মধ্যেই জমির খাজনা-খারিজের কাজ করছে দালালরা। দালালদের হাত ছাড়া কোন কাজ করা প্রায় অসম্ভব বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, জমির খাজনা, খারিজ, নামজারি, মিসকেসসহ এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ভূমি অফিসে গেলে দালাল ছাড়া কোনো কাজই করা যায় না। উপজেলার রাজানগর, জগদল, তাড়ল ইউনিয়ন ভূমি অফিস ‘দুর্নীতির আখড়ায়’ পরিণত হয়েছে। অফিসের সাথে যোগসাজসে দালালরা ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানান। ভুক্তভোগী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও ভাটিয়ারগাঁও এর বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেছেন, খাজনা খারিজ করতে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত ফি থাকলেও, সে কাজ করতে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে। প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এ অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা টাকা লেনদেন না করলে কাজ করছে না।
জগদল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রহরী প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস বলেন ‘অফিসের সব কাজ মির্জা হোসেন করেন। আমি সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত লোক হিসেবে নিয়মিত বেতন ও ভাতা পাই। কিন্তু তহশিলদার স্যার আমাকে অফিসে আসতে নিষেধ করাতে আমি অফিসে যেতে পারছি না। বিষয়টি আমি এসিল্যান্ড অফিসে জানালে তাতেও কোন কাজ হয়নি।’ সরেজমিনে জগদল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের চেয়ারে বসে টেবিলের উপর ভলিউম বই খুলে কাজ করছেন মির্জা হোসেন। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি দালাল না কর্মচারী। তবে ইউনিয়ন ভূমি তহশিলদারের অনুমতি নিয়েই সরকারি অফিসে কাজ করছেন বলে অভিযুক্ত মির্জা হোসেন জানান, আমি সার্ভেয়ার হিসেবে অফিসের কাগজপত্র তৈরি করে দিই।
এ নিয়ে জগদল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার মো. ইউনুস মিয়ার সাথে আলাপ হলে তিনি সিলেটের ডাককে বলেন, প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসকে আমি বের করে দিয়েছি তবে মির্জা হোসেন প্রসঙ্গে তিনি কথা বলতে রাজি নন। একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে এসব বিষয়ে তার সাথে কথা না বলে- উপজেলা এসিল্যান্ড অফিসে কথা বলতে বলেন। এদিকে, তাড়ল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে রুবেল মিয়া নামের এক লোক বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিষয়ে তহশিলদার আব্বাস মিয়া বলেন, সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত না হলেও সে আমাদের অফিসের স্টাফ হিসেবে কাজ করছে।
একই অবস্থা উপজেলার রাজানগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। তাপস ব্যানার্জী অফিস সহায়ক হিসেবে জগদল ভূমি অফিসে নিয়োগপ্রাপ্ত অথচ কাজ করেন রাজানগর অফিসে।
জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমাউন রশিদ লাভলু বলেন, আমার অফিসের পাশেই ভূমি অফিস বিভিন্ন সময় অনেক অনিয়মের অভিযোগ আসে। এসব অনিয়ম বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি এসব বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ বিশ্বাস বলেছেন, তিনি অফিসে মাত্র নতুন এসেছেন। বিষয়টি তিনি অবশ্যই দেখবেন।