কালনী-কুশিয়ারায় বিলীন হচ্ছে মাথা গোঁজার ঠাঁই
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুন ২০২৪, ১:৫৫:৩৮ অপরাহ্ন
আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : ‘ঐখানটাতে আমার বাড়ি ছিল। নদী ভাঙতে ভাঙতে বর্তমানে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। আর মাত্র আধাশতক বাকি, বাড়ির বাকি সবটা জায়গা গিলে খেয়েছে নদী।’ ইশারায় নদীর পানি দেখিয়ে একথা বললেন সামরিক মিয়া।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নে কালনী-কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের কবলে পড়া সৌলরী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। গত সোমবার সরেজমিনে গেলে তিনি এ তথ্য জানান।
সামরিক আরো জানান, ‘যে আধাশতক জায়গা বাকি আছে সেটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে পরিবার নিয়ে আমি বাস্তুহারা হয়ে যাব।’
সামরিক মিয়ার মতো নদীগর্ভে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে পার্শ্ববর্তী বদরপুর গ্রামের সুজিত, অভিনাষ, অধীর, অশ্বিনী, দিপঙ্কর, মনোরঞ্জন, অরবিন্দ, নীলকান্ত, মতিন্দ্র, যামিনী, রমাকান্ত, গৌতম, সুষেন, লবু ও ভূষেনসহ আরও অন্তত ৩০ জনের পরিবার। এছাড়াও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আরো চারটি গ্রামের হাজারো পরিবার কালনী-কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের শঙ্কায় দিনরাত পার করছে। এর মধ্যে শতাধিক পরিবার কাকাইলছেও ইউনিয়নের।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালনী কুশিয়ারা নদীর ভাঙন প্রতিদিন বাড়ছে। কাকাইলছেও ইউনিয়নের মণিপুর, সৌলরী, কালনীপাড়া গ্রামের কয়েকটি বসতঘর যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বিপাকে পড়েছেন অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষগুলো। ভাঙন কবলিত অনেকে আত্মীয়-স্বজন ও সরকারি পতিত ভূমিতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সৌলরী গ্রামে নদীভাঙন কবলিত রেখা রাণী সূত্রধর, বিশাখা রাণী সূত্রধর ও নীরা মণি সূত্রধর জানান, তারা গত দু’বছর ধরে নদী ভাঙনের কবলে। একটু একটু করে পুরোটা বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ছায়া রাণী সূত্রধর জানান, ‘আমাদের অনেক বড় বাড়ি ছিল। দুই বছর ধরে নদী আমাদের বাড়ি ভেঙে শেষ করে দিয়েছে। গত ক’দিনে শেষ সম্বলটুকু নদী গিলে খেয়েছে। এখন আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই।’
কালা রবিদাস নামে আরেকজন জানান, ‘দুইবছর ধরে নদী আমাদের ভাঙছে। ভাঙতে ভাঙতে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। কার বাড়ি গিয়ে উঠব ভেবে পাচ্ছি না।
এদিকে, ২০২১ সালে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন থেকে সৌলরী গ্রাম রক্ষার জন্য ২০ হাজার বস্তা জিও ব্যাগ (বালু ভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ফেলা হয়। বর্তমানে ব্যাগগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
বদরপুর গ্রামের বাসিন্দা শোভা রাণী সূত্রধর জানান, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন ছেলে, পুত্রবধূ ও তাদের সন্তান নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছি। গত কয়েক বছরের ভাঙনে ভিটের এক তৃতীয়াংশ বিলীন হয়ে গেছে। এখনও ভাঙছে। এনিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল ভৌমিক জানান, ‘নদীভাঙনের কবলে পড়া গ্রামগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করছি’ বিপদকালীন একটা ব্যবস্থা হবে।