‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর আরাফাত ময়দান
আজ পবিত্র হজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৬:২৯ অপরাহ্ন
এনামুল হক রেনু :
আজ শনিবার পবিত্র হজ। আরাফাত ময়দানে ফজরের পরই শুরু হবে চলতি বছরের হজের কার্যক্রম। এর আগে মক্কার অদূরে মিনায় স্থাপিত তাঁবুতে অবস্থানের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে কা’বা চত্বর।
চলতি বছর বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে উপস্থিত হয়েছেন মক্কায়। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে ১২ জিলহজ (১৮ জুন, মঙ্গলবার) শেষ হবে পাঁচদিনের হজের কার্যক্রম।
হজ অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার হজযাত্রীদের মিনায় যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সারা বিশ্ব থেকে আগত হজযাত্রীরা পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে গতকাল বাদ আসর মক্কা থেকে মিনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছেন। মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।
গতকাল শুক্রবার থেকে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত বৃহস্পতিবার রাতেই হজযাত্রীদের তাঁবুর শহর মিনায় নেয়া শুরু করেন মুয়াল্লিমরা। এশার নামাজের পর মক্কার নিজ নিজ আবাসন থেকে ইহরামের কাপড় পরে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হন হাজিরা। মিনায় পৌঁছে ফজর থেকে শুরু করে এশা অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন নিজ নিজ তাঁবুতে।
এরপর আজ ৯ জিলহজ সকাল থেকে হাজিগণ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে শুরু করেছেন। আজ দুপুর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করাই হলো হজের মূল ফরজ আমল। এদিনকেই বলা হয় হজের দিন। এ দিনের নাম ইয়াওমুল আরাফা।
এরপর আরাফার ময়দান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় রাত যাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন তারা।
১০ জিলহজ মিনায় প্রত্যাবর্তনের পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি, মাথা মু-ন এবং তাওয়াফ জিয়ারত। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করে প্রতিদিন ৭টি করে প্রতীকী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজিরা। সবশেষে কা’বা শরিফে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনের হজের আনুষ্ঠানিকতা।
এদিকে, বাংলাদেশ হজ অফিস ও হজ আইটি দলের সমন্বিত অগ্রবর্তী একটি দল মিনায় পৌঁছেছেন এবং তাঁবুতে অফিস স্থাপন করে নিজ নিজ কার্যক্রম শুরু করেছেন।
সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের হজের শেষ ফ্লাইট ছেড়ে গেছে বুধবার (১২ জুন)। পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে মোট ৮৫ হাজার ১২৯ জন সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। তবে ভিসা পাওয়ার পরও এবার ৫১ জন হজে যেতে পারেননি। তাদের মধ্যে সরকারি মাধ্যমে তিনজন, বেসরকারি মাধ্যমের ৪৮ জন রয়েছেন। ধর্মমন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
৫১ জন কেন হজে যেতে পারেননি এর সুস্পষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি। এবার সরকারি মাধ্যমে হজে গেছেন চার হাজার ৪৮২ জন এবং বেসরকারি মাধ্যমে ৮০ হাজার ৬৩০ জন।
ধর্মমন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের হজযাত্রীরা ২১৭টি ফ্লাইটে সৌদি আরবে গিয়েছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ১০৫টি, সৌদি এয়ারলাইনস ৭৫টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ৩৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ ফ্লাইট রওনা দেবে ২২ জুলাই। এ বছর সরকারি হজযাত্রীর কোটা ছিল ৪ হাজার ৫৬২টি এবং বেসরকারি হজযাত্রীর কোটা ছিল ৮০ হাজার ৬৯৫টি।
চলতি বছরে ধর্মমন্ত্রণালয় নির্ধারিত সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা।
এ বছর ২৫৯টি এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে হজে লোক পাঠিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৬০টি এজেন্সিকে বিভিন্ন অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৭টি এজেন্সির নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়েছে। বাকিগুলোকে অর্থদ-, তিরস্কার এবং সতর্ক করা হয়েছে।
এ বছর হজে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ জন এবং নারী ২ জন। এদের মধ্যে মক্কায় ১৩ জন এবং মদিনায় ৪ জন মারা গেছেন।
সবশেষ কুমিল্লার নাঙলকোটের মো. শাহ আলম নামে একজন মারা গেছেন। ৭৭ বছর বয়সী শাহ আলম ফ্লাইনাসের একটি ফ্লাইটে গত ৮ জুন মক্কায় পৌঁছান।
সৌদি আরব থেকে ফিরতি ফ্লাইটগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের ১২৫টি, সৌদি অ্যারাবিয়ানের ৭৭টি, ফ্লাইনাস ৩৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করার কথা রয়েছে।
গতবারের মতো এবারও প্রচ- গরমের ভোগান্তি সঙ্গী হচ্ছে হজযাত্রীদের। হজের সময় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও পৌঁছাতে পারে বলে হজযাত্রীদের সতর্ক করেছে মক্কার আবহাওয়া দপ্তর।
বলা হয়েছে, এ বছর হজযাত্রীরা কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন। এর মধ্যে তাপমাত্রার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি অন্যতম।
সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুহাম্মদ আল-আব্দুল্লাহিল বলেছেন, উচ্চ তাপমাত্রা হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
চলতি বছর মক্কায় প্রবেশের তাসরিহ বা নুসুক কার্ড ছাড়া কাউকে পাওয়া গেলে ১০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদ- ও কারাদ-ের বিধান করা হয়েছে। ডিজিটাল এ নুসুক কার্ডে সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকে। হজের জন্য মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা, মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে চাইলে এ কার্ড অবশ্যই দেখাতে হবে।
সৌদি আরবের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সূত্রে আরব নিউজ জানিয়েছে, গতবছর ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন পুরুষ ও নারী হজ পালন করেছেন। যার মধ্যে বিদেশির সংখ্যা ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯১৫ ও সৌদি আরবের হাজির সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩০ জন।
এদিকে সৌদির জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিস্টিকসের সূত্রে সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, গত ৫৫ বছরে অর্থাৎ ১৩৯০ হিজরি (১৯৭১) থেকে ১৪৪৪ হিজরি (২০২৩) সাল পর্যন্ত ১০ কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৫৬৬ জন নারী-পুরুষ হজ পালন করেছেন।
সৌদি আরবের মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ জানায়, এ বছর প্রথমবারের আরাফার ময়দান থেকে প্রচারিত হজের খুতবার অনুবাদ প্রচারিত হবে বিশ্বের ৫০টি ভাষায়। খাদেমে হারামাইন শরিফাইন বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের তত্ত্বাবধায়নে এটিই এখন পর্যন্ত হজের খুতবা অনুবাদের সবথেকে বড় প্রজেক্ট।
৫০টি ভাষার মধ্যে অন্যতম হলো বাংলা, ফরাসি, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু, হাউসা, রুশ, তুর্কি, পাঞ্জাবি, চীনা, জার্মান, সুইডিশ, ইতালিয়ান, মালায়ালাম, বসনিয়ান, ফিলিপিনো, মালয়, সোয়াহিলি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং আমহারিক ইত্যাদি।
হজের মূল খুতবা আরবিতে প্রদান করবেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি। তাঁর প্রদত্ত সেই খুতবার বাংলা অনুবাদ করবেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক এবং নাজমুস সাকিব। তারা দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
স্মার্ট ফোন, হারামাইন শরিফাইনের ওয়েবসাইট, মানারাতে হারামাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে শোনা যাবে হজের খুতবা।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম বিশ্বের পাঁচটি আন্তর্জাতিক ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ প্রচার করা হয়। এরপরের বছর ১০টি ও ২০২২ সালে ১৪টি ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ করা হয়। ২০২৩ সালে তা বাড়িয়ে ২০টি ভাষায় করা হয়। এ বছর হজের খুতবা অনুবাদের পরিধি বাড়িয়ে ৫০ ভাষা পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে।