নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ॥ ৪ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে ॥ সতর্কতা জারি
ফের বন্যার শঙ্কায় সিলেট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৭:৪৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় তৃতীয় দফা বন্যার দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছেন সিলেট অঞ্চলের মানুষ। রোববার রাতে এবং সোমবার দিনভর সিলেটে ভারি বর্ষণ হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলের মানুষ উদ্বিগ্ন।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২য় দফা বন্যার ধকল এখনো কেটে উঠা যায়নি। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এখনো সাড়ে ৮ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। কুশিয়ারার একটি পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ছাড়া সবকটা পয়েন্টে পানি নেমে গিয়েছিলো। গতকাল সোমবার পুনরায় সুরমা, কুশিয়ারা, সারি নদীর ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে পানি। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে সতর্কতা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগে থেকেই বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে চলা ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা বেড়ে বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বিকেল ৩টায় কুশিয়ারার আমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টেও বিপদসীমার কাছাকাছি চলেছে। বাকি ৭ পয়েন্টেও নদীর পানি আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, সিলেটে গতকাল সোমবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে মোট ১৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার। এতে সিলেটের নি¤œাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। সোমবার সকাল নয়টা থেকে ৩ জুলাই বুধবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অন্যদিকে, ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতেও ভারি বর্ষণ হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট আইএমডির তথ্যমতে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত গত ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৪০ মিলিমিটার। এর মধ্যে সোমবার সকাল নয়টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩১৩ মিলিমিটার।
জানা গেছে, টানা বর্ষণে ও উজানের ঢলে বিভিন্ন এলাকায় ৩য় দফা বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জসহ আশপাশ এলাকা। সিলেট সদর উপজেলার নি¤œাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে নতুন করে। সিলেট নগরীতেও তীব্র জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা এলাকা পানি উঠে যায়। গতকাল সোমবার বিকেলের বৃষ্টিতে শাহজালাল উপশহরসহ বেশ কিছু এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরকম বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আগের মতো জলাবদ্ধতায় ডুবতে পারে নগরী।
গোয়াইনঘাটে দ্রুত পানি বাড়ায় বন্যার শঙ্কায় উপজেলাবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঝিসহ ৪৭টি নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়ায় গোয়াইনঘাটে তৃতীয় দফা বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছি। পাশাপাশি পরিস্থিতির অবনতি হলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়; সেজন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার পাশাপাশি উদ্ধার কাজের জন্য ৪৭টি নৌকাও প্রস্তুত রেখেছি।’
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সোমবার সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরআগে রোববার সকাল ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার। গতকাল সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫৬.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত সিলেটে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত সিলেটে ৭ লাখ ৩৩৬ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এছাড়া ৬৯৮ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৮ হাজার ৩০৮ জন মানুষ। যারা আগের বন্যায়ও এখনো বাড়ি ফিরতে পারেননি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ৩য় দফা বন্যার আশঙ্কা আগ থেকে করা হচ্ছিলো। পরিস্থিতির জন্য সতর্কও করা হচ্ছিলো। তিনি বলেন, ভয় নয় সতর্কভাবে আমাদেরকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সরকারের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুনজিত কুমার চন্দ বন্যা পরিস্থিতিতে ওয়ার্ডভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে ৬ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিদের্শনা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। গত ১৭ জুন থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিতে জেলায় ২য় দফা বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। গতকাল সোমবার ১ জুলাই থেকে ৩য় দফা হানা দিচ্ছে বন্যা।