শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ৬:২৯:২৭ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ঃ সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও আজ বুধবার থেকে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ শুরু হবে শারদীয় দুর্গা পূজার মূল পর্ব। আজ থেকে শুরু পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব আগামী ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমী পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হবে। আজ বুধবার মহাষষ্ঠী। দেবী দুর্গার ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা প্রশস্তা। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মাতৃরূপে আজ মন্ডপে মন্ডপে ঠাঁই নেবেন দেবী। শঙ্খ ধ্বনি, ধূপের সুঘ্রাণ ঢাক-ঢোলের সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজোমন্ডপগুলো। পঞ্জিকা মতে জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার দোলায় চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায় নেবেন ঘোটকে চড়ে। পূরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম বসন্তকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। পরে রামচন্দ্র তাঁর পতœী সীতাদেবীকে উদ্ধারের জন্য শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। শরৎকালের এই পূজাকে অকাল বোধন বলা হয়। প্রতিমা দেখেই ভক্তের মনের ভাব প্রকাশিত হয়। তাই, ভক্ত নিজের হৃদয়ে, ঘটে এবং প্রতিমায় দেবী দুর্গার পূজা করে থাকেন। আসুরিক শক্তির বিনাশ আর শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য সনাতন হিন্দু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী পূজা। শঙ্খ-ধ্বনি, উলুধ্বনি আর নব পত্রিকায় প্রবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবী মহিষাসুর মর্দিনীর আরাধনা। দুর্গা পূজায় প্রতিদিনই অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়। আগামীকাল নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এছাড়া,শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। রোববার বিজয়া দশমী উপলক্ষে সরকারি ছুটি। ফলে, এবার দুর্গাপূজা চার দিনের ছুটিতে গড়াবে। দুর্গা পূজা উপলক্ষে নগরীর পূজোমন্ডপগুলো সাজানো হয়েছে রকমারী সাজে। নগরীর নাইওরপুলে রামকৃষ্ণ মিশন মন্ডপ, বলরাম জিউড় আখড়া, মাছুদিঘিরপারের ত্রিণয়নী, মণিপুরী রাজবাড়ি, লামাবাজার তিন মন্দির, কাজলশাহ, মিরের ময়দান, জামতলা, তোপখানা, মাছিমপুর মণিপুরী পাড়া, মাছিমপুর কুরি পাড়া, চালিবন্দর, যতরপুর, মিরাবাজার, রায়নগর, সোনাতুলা, গোপালটিলা, দুর্গাবাড়ি, বালুচর, দাড়িয়াপাড়ার চৈতালী সংঘ, সনাতন যুব ফোরাম, জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়ের সত্যম শিবম সুন্দরম, আম্বরখানা, করেরপাড়া, পনিটুলা, আখালিয়া কালিবাড়ি, শেখঘাট, গোটাটিকর, জৈনপুর ও শিববাড়ির পূজোমÐপগুলো পূজোর সাজে সাজানো হয়েছে। এছাড়াও, নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও উপজেলা এবং জেলাসমূহে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কানাইঘাট ঃ কানাইঘাট (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কানাইঘাট উপজেলায় এবার ৩০টি মন্ডপে সার্বজনীন দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তÍুতি নেয়া হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এবছর দুর্গাপূজায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ৩০টি পূজা মন্ডপে সব-ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘেœ উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয় এজন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন, থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল আউয়াল ও আনসার ভিডিবি কর্মকর্তা মোস্তাফিদুল হক। এছাড়া গত কয়েকদিন থেকে উপজেলার প্রত্যেকটি মন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে পূজা আয়োজনে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সেনাবাহিনীর কানাইঘাট ক্যাম্পের ইনচার্জসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। প্রতিটি মন্ডপে সেনাবাহিনীর নজরদারি রাখা হবে বলে জানা গেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপের সার্বিক নিরাপত্তার সব-ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে আগের মতো সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ৩০টি পূজা মন্ডপে উপজেলা প্রশাসনের ২ জন করে সরকারি কর্মর্কর্তা এবং ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় একজন করে সরকারি ট্যাগ অফিসার সার্বক্ষণিক ভাবে পূজামন্ডপের দেখভাল করবেন। পাশাপাশি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৭টি পূজা মন্ডপে ৮ জন করে স্মার্ট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত আনসার ভিডিপি সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন এবং সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশের টহল থাকবে। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভজন লাল দাস জানান, যুগ যুগ ধরে কানাইঘাটে ধর্মীয় সম্প্রীতির মাধ্যমে আমরা সার্বজনীন দুর্গাপূজা করে আসছি। এখানে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি রয়েছে।
জগন্নাথপুর ঃ জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জগন্নাথপুর উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপ‚জা আজ বুধবার থেকে ষষ্ঠী প‚জার মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে। এবার উপজেলার ৪১টি মন্ডপে পূজা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রতিটি প‚জা মন্ডপের প্রতিমা তৈরি, আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার প‚জা মন্ডপগুলো উৎসবের আয়োজনে কাঁটচাট করা হয়েছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস রয়েছে। এছাড়াও জগন্নাথপুরের সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির ইতিহাস ভালো রয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা প‚জা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সতীশ গোস্বামী জানান, একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন মিলিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার ৪১টি প‚জা মন্ডপে শারদীয় দুর্গা উৎসব হচ্ছে। প‚জা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এবার ধর্মীয় বিধি বিধানের আলোকে সর্বজনীন ও পারিবারিক প‚জা অর্চনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু মন্ডপে ধর্মীয় গানের আয়োজন রয়েছে। এর বাইরে অন্য কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই। জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, জগন্নাথপুরের শারদীয় দুর্গা উৎসব শান্তিপ‚র্ণ করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি প‚জা মন্ডপে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে। এছাড়াও সেনাবাহিনী, র্যাব সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদারকি করবে। ইতোমধ্যে আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
বিশ্বম্ভরপুর ঃ বিশ্বম্ভরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বিশ্বম্ভরপুরে ২৮টি মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ বুধবার শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে পূজা আয়োজনে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসন সেনা বাহিনী, র্যাব বাহিনী, বিজিবি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করছেন। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে সেনা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে উপজেলায় পূজার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মফিজুর রহমান সভায় মন্দিরগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেনা বাহিনীর মেজর রেজা, সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার সাইদুর রহমান, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসক্লাব সভাপতি স্বপন কুমার বর্মন, এনএসআই প্রতিনিধি এমরান আহমদ, উপজেলা আনসার ভিডিভি শিউলী বেগম প্রমুখ। এদিকে, দুপুরে সেনা বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাফিজ ইমতিয়াজ (পিএসসি), মেজর রেজা, ওয়ারেন্ট অফিসার সাইদুর রহমান সহ সেনা বাহিনী টিম উপজেলার বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন এবং সার্বিক বিষয় নিয়ে খোজ খবর নেন। সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মফিজুর রহমান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আয়োজিত কাইতকোনা পূজা মন্দির, জনতা বাজার মন্দির সহ কয়েকটি মন্দির পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাফিজ ইমতিয়াজ (পিএসসি) বলেন শারদীয় দূর্গাপূজা নির্বিগ্নে শান্তিপূর্ণ ভাবে উদযাপনে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনা বাহিনী সর্বদা সহযোগিতা করবে এবং কোনো ভাবেই আইনশৃংঙ্খলা বিঘœ যাতে না ঘটে এ ব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকার আহবান জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মফিজুর রহমান সম্প্রীতির বন্ধনে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় আরো সুন্দর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠান করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।