আহত ৩৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি
রাজধানীতে ৩ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ রণক্ষেত্র, আহত শতাধিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ৪:৫৯:০৩ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার জেরে যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, এপিবিএন, ছাড়াও যাত্রাবাড়ী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়।
এ সময় কলেজটির ১০ তলা ভবনের প্রতিটি তলায় ভাঙচুর, বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই হামলা-সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় দু’পক্ষের অনেকে আহত হন।
তাদের মধ্যে ৩৩ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রয়েছে বলে জানা গেছে। মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, তাদের কলেজে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এরপর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
কলেজের টাকা-পয়সাও লুট করা হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত হয়, ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জের ধরে রোববার রাজধানীর ৩৫টি কলেজের ছাত্ররা পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে তারা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
এ সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজে সাতটি কলেজের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার হলেও হামলা চালায় ছাত্ররা। তাদের তাণ্ডবে পরীক্ষা পণ্ড হয়ে যায়। পরে বাধ্য হয়ে এই পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে রোববার রাতেই সেন্ট গ্রেগরি কলেজে হামলা চালায় সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্ররা।
রাতেই তারা সংবাদ সম্মেলন করে সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা-ভাঙচুরের বিচার ও প্রশাসনিক কাগজপত্র ফিরিয়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। তারা কলেজের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে।
ওই ঘটনার জের ধরেই গতকাল সোমবার ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করে কবি নজরুল কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ডিএমআরসির উদ্দেশে রওনা হন দুই কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী।
তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল নিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় যায়। অপরদিকে ডিএমআরসির ছাত্ররাও অবস্থান নেয় সড়কে, স্থানীয়রাও জোগদেন তাদের সঙ্গে। এক পর্যায়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আহত হয়ে সড়কে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করেছেন।
অপরদিকে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর যাত্রাবাডী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে ৩৫ জনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে আহত অবস্থায় ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয।
এদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর পেটে গুলি লেগেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে, গত রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় ভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে ড মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মামলা করেছে পুলিশ। রোববার সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে মামলাটি করেন।