সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা নাহিদ ও আসিফ মাহমুদ
দেশে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ৫:১৯:৩৮ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : দেশে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে। সেটি না হলে একদিনে এতগুলো ঘটনা কোনোভাবেই কাকতালীয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দুর্বলতা স্বীকার করে সকলকে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি বর্জন করে সভা-সমাবেশের আহŸান জানান। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ঐক্যের আহবান জানান নাহিদ।
বলেন, অনেকগুলো ঘটনা আজ ঘটেছে। এর মধ্যে দেখা গেছে, ভোররাত থেকে ঢাকায় বাস, মাইক্রোবাসে করে কিছু সাধারণ মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে ঋণ দেয়ার নাম করে। অহিংস গণঅভ্যুত্থানের নামে একটি প্ল্যাটফরম পুরো মিথ্যা প্রচারণা করে মানুষকে নিয়ে এসেছে। ওই প্ল্যাটফরমের আহŸায়ককে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা চলছে। বড় কোনো পরিকল্পনা না থাকলে একদিনে এতগুলো ঘটনা কাকতালীয় না। আমরা মনে করছি, এখানে নানা পক্ষের পরিকল্পনা আছে। সরকার সফলভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম করুক, এটা হয়তো অনেকেই চাইছে না। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, পুলিশে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। প্রশাসনে স্থবিরতা কাটানোর জন্য আমরা একটা বড় পরিকল্পনা করছি। এগুলো নস্যাৎ করতে আমাদের এসব ঘটনায় ব্যস্ত রাখতে অ্যাটেনশন এদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিনা এটা আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমরা এটা ইনভেস্টিগেট করছি, এই ঘটনার সঙ্গে দেশে কিংবা দেশের বাইরে কারা জড়িত।
রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যের আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু একটা অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমরা আছি। সকলের ভেতরে একটা বিপ্লবী চেতনা আছে, সেটা যেন আমরা ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করি। আমরা যেন সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করি। এখানে রাজনৈতিক দলগুলো সবার ভূমিকা নেয়ার আছে। আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থানে আমাদের মধ্যে যেরকম ঐক্য ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের অংশীদারিত্ব সবারই আছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের দুর্বলতা স্বীকার করে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশের দুর্বলতা ছিল। দুর্বলতা ছিল বলেই এটি সংঘর্ষের দিকে গেছে, এটা আমরা স্বীকার করছি। কিন্তু পুলিশ তো একটা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। যেখানে এত শিক্ষার্থী যখন নেমে এসেছে, তাদের মুখোমুখি হলে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেত। প্রাথমিকভাবে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু তারা শিক্ষার্থীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়নি। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের দুর্বলতা থাকলে সেটা আমরা আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করছি। পুলিশকে আরও বেশি সক্রিয় করার জন্য একটা বড় ধরনের রদবদল করা হয়েছে। এটা চলমান থাকবে। যারা যেসব জায়গায় ব্যর্থ হচ্ছে তাদের আমরা পরিবর্তন করবো।
উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, প্রথম আলো নিয়ে একটি উত্তেজনা দেখতে পাচ্ছি কয়েকদিন ধরে। গতকালও এ রকম উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল অফিসের সামনে। রাজশাহীতে তাদের অফিসে ভাঙচুর হয়েছে এবং চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। কোনো গণমাধ্যম বা পত্রিকার বিরুদ্ধে যদি জনগণের কোনো অংশের অভিযোগ থাকে, ক্ষোভ থাকে, তারা সেটি প্রকাশ করতে পারে। তবে সেটি অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে হতে হবে। কোনো পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর করা, পত্রিকা বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা- আমরা সমর্থন করি না। এই ধরনের ঘটনা পরে ঘটলে টলারেট করা হবে না।
তিনি আন্দোলনকারীদের আহবান জানিয়ে বলেন, ক্ষোভ থাকলে শান্তিপূর্ণভাবে তা প্রকাশ করেন। মানুষের সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তারা আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে। আমরা আহবান জানাবো, কোনো অনাকাঙ্খিত বা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে যেন জনগণ অংশ না নেয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন কাজ থেকে যেন আমরা বিরত থাকি।
পুলিশের বাধা টপকে হামলা হয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
পুলিশের বাধা টপকে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যাত্রাবাড়ী অংশে তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বাধা টপকে তারা চলে যায়। আমাদের জানানো হয়েছে, শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনা দমানোর চেষ্টা করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হতাহতের বিষয়ে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে। এই ধরনের ঘটনাকে অবশ্যই টলারেট করা হবে না। সংঘর্ষ এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। সংঘর্ষ এড়াতে কলেজ কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
তবুও সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা দেখেছি সোহরাওয়ার্দী কলেজের ৭ জন এবং মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ৩ জন নিহতের খবর রটেছিল। তবে এখন পর্যন্ত কারও নিহত হওয়ার কোনো সংবাদ আমরা পাইনি।
অনেকেই আহত হয়েছে, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনেক কিছু শোনা যাচ্ছে, তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, পুলিশের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান আছে। প্রায় ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ এসআই এবং সাড়ে ৪ হাজার কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
সকল পক্ষের প্রতি আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটা সেক্টরে সংস্কারের জন্য সময় দিতে হবে।
সবাইকে ধৈর্য ধরার আহŸান থাকবে। আপনারা জানেন, সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে যে মতামত চাওয়া হয়েছে, সেখানে যার যার মতামত দিবেন।
ডেস্ট্রাকটিভ ওয়েতে না গিয়ে কনস্ট্রাকটিভ ওয়েতে আমরা কীভাবে দেশ গড়তে পারি সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম ও ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর।