সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের হয়রানির অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ৪:৪৭:১১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন কানাইঘাটের রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেগঞ্জ গ্রামের নূর উদ্দিনের ছেলে মো. রাসেল রবি। জমি উদ্ধারের নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার প্রতারণার শিকার হয়ে জেল খাটতে হয়েছে তাকে। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ ও গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের মামলা ও হুমকির কারণে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার পিতা এবং ভাইয়েরা।
গতকাল মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মো. রাসেল রবি। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, তার দাদা মরহুম সজ্জাদ আলী একজন সৈনিক ছিলেন। তিনি ফতেগঞ্জ হাওরে ১৬৫.২২ একর জমির মালিক থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার পিতা মৌরসি সূত্রে প্রায় দশ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির মালিক হন।
তার দাদার মৃত্যুর পর এই সম্পত্তির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আত্মীয় স্বজনের। এক পর্যায়ে আত্মীয় স্বজনদের হুমকির কারণে তার পিতা প্রাণ রক্ষার্থে বিদেশ চলে যেতে বাধ্য হন। পরে বিএস মাঠ জরিপ চলাকালে সবাই মিলে তাদের নামে রেকর্ড করিয়ে পুরো ১৬৫.২২ একর জমি জবর দখল করে নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাসেল রবি জানান, ২০০৫ সালে কানাইঘাট উপজেলা ভূমি অফিসারের নিকট জমি জবর দখলের অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি আমলে নেন। কিন্তু উভয়পক্ষ জমির কাগজপত্র প্রদর্শন করতে না পারায় ভূমি অফিসের কর্মকর্তা তার দাদার মালিকানাধীন জমি খাস হিসেবে ঘোষণা করে প্রতিপক্ষকে দখলচ্যুত করেন। প্রতিপক্ষ ২০০৬ সালে ঊর্ধ্বতন সহকারী জজ কানাইঘাট আদালতে একটি স্বত্ত মামলা (নং-১৫/২০০৬) দায়ের করে পুনরায় ওই জমি জবর দখল করে। মামলাটি ২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর খারিজ হয়। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ তার ফুফুতো ভাইদের কাছ থেকে কিছু জমি ক্রয় করেন।
সেই সুবাদে পরিচয়ে তাদের জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করে তা উদ্ধারের আশ্বাস দেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। সরল বিশ্বাসে তার পিতা নূর উদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদের নামে আমমোক্তার দলিল (নং- ৩৪৭৪/২০১২) সম্পাদন করেন।
এরপর তার আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শক্তিকে কাজে লাগিয়ে রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন আব্দুস সামাদ। তিনি বিশ্বাস ভঙ্গ করে পুরো সম্পত্তি গ্রাসের উদ্দেশ্যে তাদের পূর্ব শত্রæদের সাথে হাত মেলান। সম্পত্তির দাবি ত্যাগ না করলে কারাগারে পচিয়ে মারার হুমকি দেন। চক্রান্তের অংশ হিসেবে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাদের ওপর একের পর এক মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করাতে থাকেন।
২০২০ সালে হাঁসে বিষ প্রয়োগে হত্যা এবং ২০২১ সালে বিস্ফোরণ আইনে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এছাড়া, কানাইঘাট থানায় একাধিক মামলা করা হয়।
রাসেল আরও বলেন, ২০২২ সালে তার পিতা দেশে ফিরে আব্দুস সামাদ ও অন্যদের সাথে একাধিকবার আপোস মীমাংসার চেষ্টা করলেও তারা রাজি না হয়ে সম্পত্তির দাবি ত্যাগে নানামুখী চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে তল্লাশি দিয়ে জানতে পারেন, আমমোক্তার দলিলের শর্ত ভঙ্গ করে ৩৬ একর জমি আব্দুস সামাদ, তার ভাই আব্দুস শাকুর ও তার স্ত্রী রুমেনা বেগম গ্রহিতা হয়ে তিনটি সাফ কবালা দলিল সম্পাদন করেছেন। এসব দলিলের দাতা নজরুল ইসলাম, সনাক্তকারী এম.এ. জামান ও সাক্ষী জাকির হোসেন।
এ ব্যাপারে তার পিতা বাদী হয়ে আমলি আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআই গোলাপগঞ্জের বাঘা ভুডুগাঁওয়ের আব্দুল মন্নানের ছেলে আব্দুস ছামাদ ও আব্দুশ শাকুর. সামাদের স্ত্রী রুমেনা বেগম, নওয়াব আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম, মৃত আব্দুস সুবহানের ছেলে জাকির হোসেন ও বাঘা দৌলতপুর গ্রামের মৃত হাজী লাল মিয়ার ছেলে এম এ জামানকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাবাহিনী বিচারিক ক্ষমতা পেলে আব্দুস ছামাদ সেনাবাহিনীর কাছে তাকে সন্ত্রাসী সাজিয়ে অভিযোগ দাখিল করে। তারা আহত এক ব্যবসায়ীকে ভুল বুঝিয়ে তাকে এজহারভুক্ত আসামি করে। তিনি ওই মামলার বাদীর সাথে যোগাযোগ করলে তাকে অজ্ঞতাবশত: আসামি করা হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে এফিডেভিড দাখিল করেন।
তিনি বাদীর সহায়তায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। রাসেল রবি আরো অভিযোগ করেন, আব্দুস শাকুর, জাকির, জামান, নজরুল, গোলাগঞ্জের এস এস ফার্মেসির মালিক সালিক, থানার ওসি মির মো. আব্দুন নাসের, এস. আই. সৈয়দ জামান, এসআই আনন্দ চন্দ্র, এসআই আব্দুল হান্নান মিলে তার পিতাকে ডেকে নিয়ে বলেন, ছেলেকে মুক্ত করতে হলে ছামাদসহ আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার এবং জমির দাবি পরিত্যাগ করতে হবে।
তাদের প্রস্তাব অমান্য করলে গোলাপগঞ্জ থানায় পেন্ডিং ৪৮টি মামলার সবগুলোতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে সারা জীবন কারাগারে রাখার হুমকি দেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ৪ অক্টোবর গোলাপগঞ্জের কয়েকটি হত্যা মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। গত ১৩ নভেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করে বাড়িতে গিয়ে দেখেন অবৈধভাবে তাদের সকল জমি দখলসহ তারা বিলের পানি নিষ্কাশন করে মাছ লুট করে নিয়েছে এবং জমি শুকিয়ে চাষের অনুপযুক্ত করেছে। তিনি এই ভূমিখেকে চক্রের হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন।