আইনজীবী আলিফের বাবার আর্তনাদ
‘আমার তাহাজ্জুদগুজার ছেলেকে কিভাবে হত্যা করলো ওরা’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ৫:০৩:১১ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : ‘আমি কখনো কল্পনা করিনি আমার ছেলে এভাবে আমার আগে চলে যাবে। আমার ছেলে তাহাজ্জুদগুজার ছিল। আমার ছেলে নিয়মিত নামাজি ছিল। বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে তারা মেরে ফেলেছে। আমি আমার কলিজার টুকরো ছেলে হত্যার বিচার কার কাছে চাইবো?
এভাবেই আর্তনাদ করে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাংবাদিকদের সাথে কথাগুলো বলছিলেন আইনজীবী সাইফুলের ৭২ বছর বয়সী বাবা জামাল উদ্দিন।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী ইউনিয়নের ফারাঙ্গা গ্রামে।
পেশায় আইনজীবী এই তরুণ অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও সমাজহিতৈষী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সাড়ে তিন বছর আগে বিয়ে করেন লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের সওদাগর পাড়া এলাকার কন্যা তারিনকে। আড়াই বছর আগে তাদের ঘর আলোকিত করে আসে একমাত্র সন্তান তাজকিয়া।
আইনজীবী সাইফুলের ভগ্নিপতি কাজী মাওলানা বদরুদ্দিন সাদী জানিয়েছেন, তারিন এখন সন্তানসম্ভবা। মঙ্গলবার একদল সন্ত্রাসী কেড়ে নিলো তার স্বামীর জীবন। ভেঙে খানখান হয়ে গেল সোনালী সংসার। প্রাণপ্রিয় স্বামীকে উগ্রসন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যা করেছে এ খবর শোনার পর বেহুঁশ হয়ে গেছেন স্ত্রী তারিন। আইনজীবী সাইফুলরা ৫ ভাই ২ বোন। সাইফুল ছিলেন ৩য়।
চট্টগ্রাম কোর্টের আইনজীবী নাওশাদ আলী জানিয়েছেন, সহকর্মী সাইফুলকে সন্ত্রাসীরা বিনা উস্কানিতে ধরে নিয়ে গিয়ে রঙ্গম টাওয়ারের পেছনে নিয়ে জবাই করে হত্যা করে। পরে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহত সাইফুলের আত্মীয় এম ইয়াছিন আরাফাত জানান, বাড়িতে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন সাইফুলের আম্মা। সাইফুলের বাড়ি নয় শুধু পুরো গ্রামেজুড়ে চলছে শোকের মাতম। হতবিহবল হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
ছাত্রজীবনে তুখোড় মেধাবী ছিলেন সাইফুল।
জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেছিলেন আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে। সেই মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা খালেদ জামিল জানিয়েছেন, ‘আমাদের ছাত্র সাইফুল শুধু মেধাবি ছিল না, অত্যন্ত অনুগত ছাত্র ছিল। তাকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করবেন বলেই হয়তো বহু গুণে গুণান্বিত ছিল সে। মাদরাসার সব শিক্ষকের কাছে প্রিয় ছাত্র ছিল সাইফুল।
মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করে ইন্টারমিডিয়েট পড়েন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে। সেখানেও মেধার স্বাক্ষর রাখেন। পরে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাক্টিস করতেন তিনি। গতকালও প্রতিদিনকার মতো পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
একমাত্র সন্তান আড়াইবছর বয়সী তাজকিয়া হয়তো এখনো জানে না, তার বাবা আর কখনোই বাড়ি ফিরবে না। হাতে খেলনা নিয়ে ঘরে ঢুকে পরম আদরে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিবে না তার গাল।
একদিকে একমাত্র সন্তান তাজকিয়া, অন্যদিকে নিজেই ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা।
এরমধ্যে জীবন থেকে হারিয়ে গেল স্বামী সাইফুল। সবমিলিয়ে সাইফুলের স্ত্রী তারিনের চোখে এখন ঘোর অমানিশা। কী করবেন এখন তিনি। কী তার ভবিষ্যৎ। তার সন্তানদেরইবা কী হবে। এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারোরই।