সিলেট বিভাগের ইএনটি এন্ড হেড-নেক সার্জনদের নিয়ে শিক্ষা সেমিনার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৫, ২:১১:৩০ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক ॥ সিলেটে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো প্রথম আন্তঃমেডিকেল শিক্ষা সেমিনার। সিলেট বিভাগের সকল ইএনটি এন্ড হেড -নেক সার্জনদের সম্মিলনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে দেশের চিকিৎসা শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই আয়োজনে সিলেট বিভাগের সাতটি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অংশগ্রহণ করে এবং নিজেদের গবেষণা ও অভিজ্ঞতা উপস্থাপনার মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলে।
সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজের “নাক-কান-গলা বিভাগ” এর আয়োজনে নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত গবেষণা প্রোগ্রামে অংশ নেন সিলেটের সাতটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। নাক-কান-গলা বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী এবং রেসিডেন্ট ট্রেইনি ডা: মৌসুমীর সঞ্চালনায় এবং সিলেট ওসমানী নাক-কান-গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.নূরুল হুদা নাঈমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা: মো: ইসমাঈল পাটোয়ারী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা: এ কে এম হাফিজ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা: এম এস রহমান শামীম, অধ্যাপক ডা: মাশুকুর রহমান চৌধুরী, অধ্যাপক ডা: কাজী আক্তার উদ্দিন, অধ্যাপক ডা: ইমাদ হোসেন চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক ডা: ঋতুরাজ দেব।
স্বাগত বক্তব্যের সাথে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারী নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপস্থাপন করেন বিভাগীয় প্রধান ও কর্মসূচি পরিচালক ডা. নূরুল হুদা নাঈম। ইতিমধ্যে ১০১টি সফল কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারী সম্পন্ন হয়েছে-এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, শত বাধা সত্ত্বেও সবার সহযোগিতায় কার্যক্রমটি সুচারুভাবে চলছে। এমন আয়োজন নিজেদের মধ্যে জ্ঞানের আদান-প্রদান, সহযোগিতা, পারস্পারিক সহমর্মিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নাক কান গলা রোগীদের মানসম্মত সেবা প্রদান করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে নাক-কান-গলার বিভিন্ন রোগ বিষয়ে প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন আয়োজনের সমন্বয়কারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: সৈয়দ নাফি মাহদী। প্যানেল আলোচনায় অন্যদের সাথে আরো যুক্ত ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ শাহ কামাল ও সহযোগী অধ্যাপক ডা: মুখলেছুর রহমান প্রমুখ।
অংশগ্রহণকারী মেডিকেল কলেজসমূহ হলো সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ সিলেট। জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেলের পক্ষে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা: মোফাক্কারুল ইসলাম, ওসমানী মেডিকেলের পক্ষে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা : মাসুম বিল্লাহ, নর্থ ইস্ট মেডিকেলের পক্ষে ডা: মেহেদী হাসান অনিক, সিলেট উইমেনস মেডিকেলের পক্ষে ডা: সুদিপ কান্তি, পার্ক ভিউ মেডিকেলের পক্ষে ডা: মুফতি মোহাম্মদ শামস প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠিত হয় প্যানেল আলোচনা। এরপর প্রতিটি অংশগ্রহণকারী মেডিকেল কলেজ তাদের বিভাগীয় গবেষণা প্রবন্ধ ও কেস স্টাডি উপস্থাপন করে। এই সেশনগুলোতে উঠে আসে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, জটিল রোগের ব্যবস্থাপনা এবং সার্জিকাল কৌশল নিয়ে গবেষণালব্ধ মূল্যবান তথ্য ও অভিজ্ঞতা।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনা, রাফেল ড্র ও স্পনসর প্রতিষ্ঠান রেনেটা পিএলসির উপস্থাপনা। সনদপত্র বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইসমাইল পাটোয়ারী। তিনি চিকিৎসা বিষয়ক এমন গবেষণা ধর্মী অনুষ্ঠান আয়োজনের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন “সিলেট থেকে হেড নেক এর এত বেশি জটিল রোগীর চিকিৎসা আমরা দিচ্ছি তা অভূতপূর্ব, এখন আর এ ধরনের অপারেশনের জন্য রোগীদের ঢাকা বা দেশের বাইরে যেতে হয়না”।
অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের নাক কান গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. নুরুল হুদা নাঈম বলেন “এই সিএমই আয়োজন সিলেট অঞ্চলের চিকিৎসা শিক্ষা ও চিকিৎসকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও জ্ঞান বিনিময়ের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে এ ধরনের সেমিনার নিয়মিতভাবে আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।” ডা: নাঈম তার বক্তব্যে ভবিষ্যতে সিলেটের নাক-কান-গলার কিংবদন্তি শিক্ষক ডা: এ কে এম হাফিজ স্যারের নামে ইএনটি স্কলারশিপ চালু করার কথা জানান।
সিলেট বিভাগের সাতটি মেডিকেল কলেজের সম্মিলিত অংশগ্রহণ এবং তাদের গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপনা এই সিএমই-কে একটি সফল, ফলপ্রসূ ও গৌরবোজ্জ্বল শিক্ষা অনুষ্ঠানে পরিণত করেছে। চিকিৎসকদের পেশাগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে এমন আয়োজন ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এবং জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।