সুনামগঞ্জে কৃষকের জমি কেটে এলজিইডির সড়ক নির্মাণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৫, ১:০৪:২০ অপরাহ্ন

শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে : হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা-মধ্যনগর-মহেশখলা থেকে তাহিরপুর উপজেলার বিন্নাকুলি বাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের কাজ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পের আওতায় তাহিরপুর উপজেলার অংশে শিমুল বাগান থেকে টাকেরঘাটের রাজারগাঁও পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে স্থানীয় কৃষকদের মালিকানা জমির মাটি কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। মালিকানা জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক।
এলজিইডি সূত্র জানায়, প্রায় সাড়ে ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মাহরাম নদীর উপর সেতু ও রাজারগাঁও পর্যন্ত সড়কের কাজ করছে ঢাকার এমএস হামিম ইন্টারন্যাশনাল এন্ড মো. রাশেদুজ্জামান পিটার নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৬ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পে সড়ক নির্মাণ কাজের মাটি ফেলার কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। নবনির্মিত এই সড়কটি নির্মাণ করতে ভেকুর সাহায্যে সড়কের দুইপাশ থেকে ১৫-২৫ ফুট চওড়া কৃষি জমির মাটি কেটে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যার বেশিরভাগই ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সড়কের মাটি সংগ্রহ করার কথা থাকলেও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নোয়াজ আলীসহ তাঁর অনুসারিদের যোগসাজশে জোরপূর্বক কৃষকদের জমি থেকে মাটি কেটে নেন সংশ্লিষ্টরা। এতে মাটি সংগ্রহ করে দেয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ভাগিয়ে নেন স্থানীয় এই প্রভাবশালী নেতা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, সড়কটিতে মাহারাম গ্রামের অন্তত ৩০ কৃষকের মালিকানাধীন জমির সামন ও বাড়ির আঙ্গিনার মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। কোনো ধরণের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জোরপূর্বক জমির মাটি কেটে নেয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নিম্ন আয়ের এই কৃষক পরিবারগুলো। সড়ক নির্মাণে আনন্দিত হলেও জমির মাটি কেটে নেয়ায় বিষাদ নেমে এসেছে এই পরিবারগুলোর মাঝে।
মাহরাম গ্রামের বাসিন্দা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আমি গরিব মানুষ। এই জমির উপর আমার পরিবারের আশাভরসা। সড়ক নির্মাণ হোক আমরা চাই। কিন্তু আমার মতো গরিব মানুষের পেটে লাথি মেরে সড়ক হলে আমার পরিবারের উপায় কি হবে। স্থানীয় ইউপি সদস্য কফিল উদ্দিন বলেন, জোরপূর্বক কেটে নেয়া হয়েছে জমির মাটি। বাঁধা দিলেও প্রভাবশালী লোকেরা মামলা হামলার ভয় দেখায়।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হামিম ইন্টারন্যাশনাল এন্ড রাশেদুজ্জামান পিটার এর প্রতিনিধি মো. সজিব হোসেন বলেন, নোয়াজ আলী আমাদেরকে সড়কে মাটি দিতে সহযোগিতা করেছেন। তবে তিনি কোনো আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন কিনা তা ঠিকাদার বলতে পারবেন।
এদিকে নিজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামীলীগ নেতা নোয়াজ আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সড়কে মাটি দেয়ার ক্ষেত্রে আমি ঠিকাদারকে সহযোগিতা করেছি মাত্র।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, এলজিইডির সড়ক নির্মাণ কাজে জমি অধিগ্রহণ বা ক্ষতিপূরণের কোনো বিধান নেই। প্রকল্পে মাটি ধরা রয়েছে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোথা থেকে মাটি সরবরাহ করবে সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়।