এবারও মেলেনি চামড়ার কাঙ্ক্ষিত দাম, বঞ্চিত গরিব-এতিমরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২৫, ১২:১০:০৪ অপরাহ্ন

অনলাইন ডেস্ক : গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কিছুটা বেশি হলেও তা সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম ছিল। রাজধানীতে লবণ ছাড়া বড় এবং মাঝারি আকারের গরুর কাঁচা চামড়া ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর যেসব গরুর চামড়া আকারে তুলনামূলক ছোট এবং মান কিছুটা খারাপ, সেগুলোর দাম ছিল ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।
ঢাকার বাইরের বাজারে চামড়ার দাম আরও কম। সিলেট শহরে কুরবানীর একেকটি বড় চামড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শহরের বাইরের অনেক মাদরাসা কুরবানীর চামড়া সংগ্রহ করে কোনো ক্রেতা পায়নি। অনেক কুরবানীদাতা তাদের কুরবানীর চামড়া বিক্রি কিংবা দান করতে না পেরে শেষে মাটিতে পুতে রেখেছেন। বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানার মুহতামীমগণ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছেন, মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানাগুলোর একটা বড় আয়ের উৎস ছিল কুরবানীর চামড়া বিক্রির টাকা। কিন্তু এবারও মাদরাসাগুলো চামড়ার যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় এতিমরা বঞ্চিত হলো।
লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গতবারের চেয়ে এবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় নির্ধারিত দামের অর্ধেক মূল্যে কেনাবেচা হয়েছে গরুর চামড়া।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রির টাকা সাধারণত গরিব, অসহায় ও মিসকিনদের সাহায্য করার জন্য দেওয়া হয়। চামড়ার দাম যত কম হয়, ততই এ টাকা থেকে গরিবদের সাহায্য কম পৌঁছায় এবং তারা বঞ্চিত হয়।
চামড়ার আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদে ৮০-৮৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ট্যানারিগুলোর পক্ষ থেকে। ঈদের দিন কাঁচা চামড়া আসার হারও সন্তোষজনক। এ ছাড়া চামড়ার বাজারও এবার তুলনামূলক ভালো। বিগত কয়েক বছরের মতো এবার চামড়ার মূল্য না পেয়ে নষ্ট করেননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। গতবারের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া কিছুটা বেশি দরে কিনছেন বলেও দাবি করেন আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা।
যদিও গত কয়েক বছরের মতো এবারও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়া বিক্রি করে তারা ন্যায্য মূল্য পাননি। তাদের কেউ কেউ বলছেন, এবারের দাম গত বছরের চেয়েও কম ছিল।
এবার চামড়ার বাজার অন্য বছরের তুলনায় ভালো বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ।
তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি, অনেকে চামড়ার ন্যায্য দাম না পেয়ে কিংবা সংরক্ষণের সমস্যায় নদীতে ফেলে দিয়েছিল বা মাটিতে পুঁতে রেখেছিল। এবার এমন পরিস্থিতি হয়নি। সরকার একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে– বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করেছে। এটি অতীতের কোনো সরকার করেনি। এর ফলে চামড়া নষ্ট হওয়ার হার কমেছে।
সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, গত কয়েকবারের তুলনায় এবার চামড়ার বাজার বেশ ভালো। আবহাওয়াও অনুকূলে রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ঢাকার ট্যানারিগুলো আগামী ১০ দিন লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবে। এরপর ঢাকার বাইরে থেকে সংগ্রহ শুরু হবে।
চামড়ার বাজার ঠিক রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সারা দেশে বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ বিতরণ করছে, যাতে এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলো কোরবানির চামড়ার উপযুক্ত মূল্য পায়। এ ছাড়া সরকার কাঁচা ও ‘ওয়েট ব্লু’ চামড়া রপ্তানির সুযোগও দিয়েছে সরকার।
এবার লবণ মেশানো গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ঢাকায় ট্যানারি ব্যবসায়ীদের লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনতে হবে, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
এ ছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়ার প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকায় বিক্রি হবে, যা গত বছর ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। বকরির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা, যেখানে আগের বছর ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা।
ঈদের দিন থেকে টানা ১০ দিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া ঢাকায় আনা নিষিদ্ধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১০৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ কম। তবে সরকারের প্রত্যাশা, কাঁচা চামড়া রপ্তানিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে আগামীতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়বে।