রাজধানীতে বিএনপি’র গণসমাবেশে ড. খন্দকার মোশাররফ
সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন
* গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠায় ১০ দফা ঘোষণা * ১৩ ডিসেম্বর প্রতিটি জেলা-মহানগরে
গণমিছিল ও বিক্ষোভ * ২৪ ডিসেম্বর জেলা-উপজেলায় গণমিছিল ও গণসমাবেশ
ডাক ডেস্ক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনাকে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ভোট হতে হবে ব্যালটের মাধ্যমে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গণসমাবেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের পদত্যাগ, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি, গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা করেন ।
তিনি বলেন, বিএনপির মিত্র রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সব গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে এই ১০ দফা ঠিক করা হয়েছে। সরকার গণসমাবেশে বাধা দেওয়ার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করেছে। আমাদের সাড়ে ৪শ’র বেশি নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে সব বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হয়েছে। ’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকার সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। এজন্য আমি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। তার সাথে আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। আপনারা জানেন আজকে যিনি এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তাকে আটক করা হয়েছে গভীর রাতে।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা প্রমাণ করেছেন নেতার জন্য নয় আপনারা দেশের জন্য রাজনীতি করেন। এই সমাবেশ বানচাল করার জন্য প্রশাসন ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আমাদের এক নেতা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন । আরো শত শত নেতা-কর্মী আহত করেছে। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সকল সম্পদ পুলিশ নিয়ে গেছে। পুরো কার্যালয় তছনছ করে গেছে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার এখন জনতার ভয়ে ভীত। এজন্য আমাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সভা সমাবেশ করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেখানেও বাধা। কারণ, আমরা মানুষের ভোটের অধিকারের কথা বলছি। নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা জানি এই বাংলাদেশের মানুষ আর সরকারকে ভয় পায় না। মানুষ এখন শেখ হাসিনার বিদায় চায়। খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী মতিঝিল পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে। এতে মানুষ কি বার্তা দিচ্ছে। মানুষ এখন সরকারকে সরে যেতে বলছে। মানুষ আর হাসিনা সরকারকে দেখতে চাচ্ছে না। মানুষ এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র নেতৃত্ব চাচ্ছে।
মোশাররফ আরো বলেন, বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক দিক থেকে খাদের কিনারায় পড়ে গেছে। দেশ থেকে ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে গেছে। তারা বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। যার কারণে বেগম জিয়া মুক্তি পাননি। অন্যায়ভাবে তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছে। আজকের সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। যার উদাহরণ পুলিশ আমাদের পার্টি অফিসে যা করেছে। হাসিনার পক্ষে আর দেশ চালানো সম্ভব নয়। আজকে দেশের জনগণ শুধু গরিব হচ্ছে। ২০ ভাগ গরিব এখন ৪০ ভাগে গিয়েছে। এই সরকারের এখন বিদায় চায় মানুষ। এই সরকারকে এখনি পদত্যাগ করতে হবে।
১০ দফা উপস্থাপন করে তিনি বলেন, যারা যুগপৎ আন্দোলন করবে তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি।
সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে। ভোট হবে ব্যালটে। বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আইসিটি মামলা বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎ জ্বালানি দাম কমাতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। শিশু শ্রম বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতির বিচারে কমিশন গঠন করতে হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন রাখতে হবে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশী অভিযান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও পুলিশের গুলিতে নিহতের প্রতিবাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরসহ প্রতিটি জেলা-মহানগরে গণমিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন খন্দকার মোশাররফ।
এছাড়া ১০ দফা বাস্তবায়নে আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় গণসমাবেশ থেকে ঘোষিত গণমিছিল করা হবে। এ কর্মসূচি প্রথমবারের মতো যুগপৎভাবে করবে বিএনপি।
এদিকে, গণসমাবেশ থেকে ঘোষিত ১০ দফার মধ্যে রয়েছে :
১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
৩. নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা কানুন বাতিল করা।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করা।
৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত, শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন বা দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং
১০. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।