বাঙালির বিজয়ের দিন আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:১৭:৪৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : আজ ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমপর্ণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আজ বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল স্থানে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি জাতির অমলিন উৎসবের দিন। এই উৎসবে আজ মেতে উঠবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। কালের পরিক্রমায় অবিনশ্বর বিজয় উৎসবের মূলে রয়েছে লক্ষ শহীদের বুকের তাজা রক্ত আর অগণিত মানুষের সীমাহীন ত্যাগের মহান এক গল্প। রয়েছে অম্লান ইতিহাস। ১৭৫৭ থেকে ১৯৭১ সালের পলাশীর আম্রকানন থেকে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার নিভৃত আম্রপল্লী পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়কাল জুড়ে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে বাঙালির এই রাজনৈতিক ইতিহাস। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে গোটা ভারতবর্ষ বৃটিশ শাসনের নাগপাশে আবদ্ধ হয়। তখন পূর্ব বাংলার কয়েক কোটি মানুষের জীবনেও নেমে আসে পরাধীনতার গ্লানি। বৃটিশ রাজ্যের শোষণ, বঞ্চনা ও অত্যাচার নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে নানা আন্দোলনে প্রথম থেকেই বাঙালির ছিলো সক্রিয় অংশগ্রহণ। মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির জাতীয় জীবনে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটে। এই চেতনা বুকের রক্ত ঢেলে অধিকার প্রতিষ্ঠার চেতনা, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে অন্যায় উৎপীড়ন, অত্যাচার রাজশক্তির স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিহত করার চেতনা। তখন থেকেই রাজনীতির পথে নব চেতনায় উদ্ভাসিত বাঙালির অভিযাত্রা। এরই বিপরীতে অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ বাঙালির আন্দোলন স্তব্দ করতে শাসকদের ঘৃণ্য প্রয়াস। কিন্তু শাসক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একে একে চলে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। রাজনৈতিক জীবনের এসব মাইলফলকের মাধ্যমে আরো পাকাপোক্ত হয় বাংলার মানুষের ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন। অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত এসব আন্দোলনে ভীত শাসকগোষ্ঠী প্রচন্ড আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ বাঙালির উপর। কিন্তু কোনো কিছুই রোধ করতে পারেনি বাঙালির পথচলা। এভাবেই বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ক্রমান্বয়ে রূপ নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হলে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে শুরু হয় টালবাহানা। এরই প্রতিবাদে দেশজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন। একাত্তরের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সমাবেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জাতিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম…’ ।এরপর থেকেই শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। বাংলার আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে সেই সংগ্রামের ডাক। এই একটি ভাষণে সাত কোটি বাঙালী একই ফ্রেমে বন্দী হয়। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকবাহিনী সর্বশক্তি নিয়ে বাঙালি নিধনযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সে রাতেই তিনি গ্রেফতার হন। তার এই ঘোষণাপত্র পরদিন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। বেতার যোগে এই ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। মাতৃভূমিকে দখলদার মুক্ত করতে শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রাম। স্বাধীনতার মহামন্ত্রে উজ্জীবিত বাংলার নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অস্ত্র কাঁধে তুলে নেন, গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় অস্থায়ী রাজধানীতে গঠন করা হয় মুজিবনগর সরকার। কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানীকে নিযুক্ত করা হয় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। তাদেরই নেতৃত্বে পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাক হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর সহযোগিতায় সারাদেশে চালায় নৃশংস হত্যাকান্ড, লুটপাট, নারীদের ইজ্জত হরণ। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয় গ্রামের পর গ্রাম, শহর বন্দর। লাখ লাখ মানুষ প্রাণভয়ে পিতৃ পুরুষের ভিটে মাটি, সহায় সম্পদের মায়া ছেড়ে আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। নয় মাসব্যাপী যুদ্ধে প্রাণ হারান ত্রিশ লাখ মানুষ, দুই লাখ মা-বোন স্বীকার করেন তাদের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ। অবশেষে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধে পর্যদুস্ত হয় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী। ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই শুরু হয় তাদের পরাজয় মেনে নেয়ার পালা। ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানের ৯৬ হাজার সশস্ত্র সেনা সদস্য। এরই মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের। লাল সবুজ পতাকার। বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন দীর্ঘদিনের উত্তপ্ত পথ পরিক্রমা শেষে রক্তলেখায় রচিত হয় বাঙালির বিজয় গাঁথা। আজ সেই অমর মহাকাব্যের দিন। বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ জাতীয় ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্রে বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। রেডিও টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। বিভিন্নস্থানে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার। তবে গত বছরের মতো এবারো সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকাল ৬টা ৩১ মিনিট থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি শুরু হবে।
এছাড়াও রয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিজয় র্যালি, আলোচনা সভা, র্যালী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠের আসর ইত্যাদি। এছাড়াও বাদ জুমআ বিভিন্ন মসজিদ সমূহে জাতির শান্তি, অগ্রগতি ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া এবং মন্দির ও গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা, শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী, জেলার সকল দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সমূহে বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ প্রকাশ করবে।