দিরাইয়ে শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, বেড়েছে ঠান্ডজনিত রোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ৩:৩১:১২ অপরাহ্ন
দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : দিরাই উপজেলার হাওরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে প্রচন্ড শীত পড়েছে। গ্রামের মাঠে মাঠে শীতের প্রভাব বেশ চোখে পড়ছে। শীতের কুয়াশা ভেদ করে নিজ নিজ গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বের হয় গ্রামের কর্মঠ মানুষেরা। সূর্যের দেখা পাওয়া মাত্রই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রোদ পোহাতে শুরু করে। গ্রামের লোকজন খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীতে উষ্ণতা খুঁজে ফিরে। আগুনের চারপাশে বসে তারা তাপ পোহাতে থাকে। তবে গ্রামীণজীবনে দারিদ্র্যের উপস্থিতি অস্বীকার করা যায় না। বস্ত্রাভাবে দরিদ্র পরিবারের অনেক মানুষের শীতে নাকাল অবস্থা হয়। গ্রামের অনেক প্রবীণ ব্যক্তির প্রাণহানিও ঘটে থাকে শীতের প্রকোপে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা গেছে, দিরাই আঞ্চলিক সড়কে ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। রাস্তায় লোকজনের চলাচল একবারেই সীমিত ছিল। এমনকি ভর দুপুরেও সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে। জরুরী প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষেরই কেবল দেখা মিলছে পথে-ঘাটে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষ। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গাড়ি চালক আতাউর রহমান বলেন, রাত থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে সবকিছু। বিশ ফুট দূরত্বের মধ্যে বোঝা যায় না সামনে থেকে গাড়ি আসছে কিনা। লাইট জ্বালিয়েও লাভ হচ্ছে না। দুর্ঘটনা এড়াতে খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। না হলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপজেলার শ্যামাচর এলাকার কৃষক শাহ জালাল বলেন, পানির মতো কুয়াশা পড়ছে, আর হিমশীতল বাতাসের কারণে বাসায় বসে আছি।
ইজিবাইক চালক মুজাহিদ বলেন, ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বেরুচ্ছেন না। দুপুর ১২টা বাজে অথচ দুইশ’ টাকাও রোজগার করতে পারি নি। আগের দিন দুপুর বেলা সাত থেকে আটশো টাকা আয় করেছি। আজ অর্ধেক টাকাও আয় হয় নি। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে, এক দিকে আয় কম অন্যদিকে বাজারের সব জিনিসের দাম বেশি।
এদিকে, শীতে জবুথবু প্রাণ-প্রকৃতিও। শীতের এমন প্রকোপে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ভাইরাস ও ঠা-া জনিত রোগীর সংখ্যা।
শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর-সর্দি, এলার্জি, এজমা শ্বাসকষ্টসহ ঠা-াজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারে। আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশু ও বয়স্করা।
দিরাইয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগি দেখেন সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. রবীন্দ্র তালুকদার। তার সাথে আলাপকালে তিনি সিলেটের ডাককে বলেন, শীত আসলে ভাইরাস ও ঠা-াজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে এনিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এসব সিজন্যাল রোগ হতে রক্ষা পেতে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইয়াসিন আরাফাত বলেন, হাসপাতলে স্বাভাবিক রোগীর সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে শিশুর সংখ্যা। হঠাৎ শীতের প্রকোপে বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশি এলার্জি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ। এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সচেতন হতে হবে।