নদ-নদীতে কমছে মাছ
সুখে নেই আজমিরীগঞ্জের জেলেরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ৩:৩৫:১৩ অপরাহ্ন

আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর পুরান নোয়াহাটির বাসিন্দা গিরিন্দ্র চন্দ্র দাস (৭০)। কয়েক প্রজন্ম ধরে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে মাছ শিকার করে চলছে গিরিন্দ্র দাসের পরিবারের জীবন জীবিকা। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কারণে নদীতে মাছ কমে যাওয়াতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ দুরূহ হয়ে পড়েছে তার। তাই গিরিন্দ্র চন্দ্রের পরিবারের সদস্যরা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৪১ হাজার ২৯৪ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তার মধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৫৩ জন।
শুধু গিরিন্দ্র চন্দ্র দাসই নন; উপজেলার বদলপুর, সদর ইউনিয়নের রনিয়া, নোয়ানগর, পৌরসভার ইলামনগর, জলসুখা ইউনিয়নের ঝালহাটি সহ উপজেলার অন্তত কয়েক শতাধিক জেলে পরিবার ইতিমধ্যে পেশা বদল করে যুক্ত হয়েছেন অন্য পেশায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালনী-কুশিয়ারা নদীর তীরে বাঁশ মহালের ভাটিতে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা ৭/৮ টি ছোট নৌকা তার মধ্যে ১৪ জনের একটি জেলের দল তিনভাগে বিভক্ত হয়ে কয়েকজন মিলে জাল মেরামত করছে, কয়েক জন দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা ও শীত-কুয়াশা থেকে বাঁচার জন্য বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে নৌকায় তাবু তৈরী করছে।
জেলে গিরিন্দ্র জানান, ছোট বেলা থেকে বাবার হাত ধরে এ পেশায় যুক্ত হয়ে জীবন জীবিকা বর্তমানে শেষ বয়সে এসেছি। একসময় নদ-নদীতে প্রচুর মাছ ছিল, খাল-বিল ছিল উন্মুক্ত তাই জেলে পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল। তাদের ঘরে অভাব ছিল না। এখন প্রভাবশালীরা খাল-বিলগুলো লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন আর নদ-নদীতে মাছ না থাকায় দুর্দিন যাচ্ছে আমাদের পরিবারগুলোর মধ্যে।
তিনি আরো জানান, শীতের রাতে ঠান্ডা পানিতে জাল টেনে একটি আইড় মাছ পেয়েছি, সেটি বাজারে দুই হাজার একশ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বিক্রি করেছি। তা দিয়ে আমাদের দলের সকল সদস্যদের খাবার তারপর সমান ভাগে বন্টন করে বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সাংসারিক খরচের জন্য পাঠাতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার নদীতে জাল ফেলব।
অপর জেলে হরি দাস ও সাজু দাস জানান, আগের মতো নদীতে মাছ নেই। যদি জালে মাছ আটকা পড়ে, তাহলে বাড়িতে চুলা জ্বলে। না পেলে পরিবার পরিজন নিয়ে উপোস থাকতে হয়। তবে তারা সরকারিভাবে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পায়নি। তাই তারা প্রকৃত জেলেদের সনাক্ত করে সরকারিভাবে ভাতার আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছেন।
ব্যবসায়ি সুহেল রানা জানান, গত কয়েক বছর আগেও বাজার থেকে ২শ’ টাকার মাছ কিনে নিলে আট থেকে দশ জনের পরিবারের দু’বেলা চলতো। বর্তমান সময়ে হাজার টাকার মাছ কিনলে একদিনও চলে না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান জানান, এ উপজেলায় ৬ হাজার ৫৩ জনের নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতার স্কিম এ বিভাগের মধ্যে নেই।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার জানান, জেলার হাওরাঞ্চলের জেলেদের মাছ আহরণ বন্ধ সময়ে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। জেলেদের যাতে সহযোগিতা করা যায় এজন্য আমরা একটি প্রকল্প উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে জেলার প্রকৃত মৎস্যজীবিরা দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাবেন বলে আশা করছি।