আজমিরীগঞ্জে শীতকালীন সবজি চাষে সাফল্য তোফাজ্জলের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১:৩৬:১৫ অপরাহ্ন
মো. আবু হেনা, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে : আজমিরীগঞ্জ উপজেলার তোফাজ্জল হোসেন। তিনি পেশায় একজন কৃষক। অভাব অনটনের সংসারে জন্ম হওয়ায় পাঠশালার গন্ডি পেরিয়েই পিতার সাথে নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় প্রতিবছরই চাষ করেন বোনা আমন ধান। জমিতে ফসল ফলিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করতো তার পরিবার। তিনি উপজেলার শিবপাসা ইউনিয়নের পশ্চিমবাগ কদমতারা গ্রামের আব্দুর রহমান মিয়ার পুত্র।
২০০৪ সালে ৩৬ কেয়ার বোনা আমনের আবাদ করেন তোফাজ্জল হোসেন। হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে তারসহ সকলের জমিই পানির নিচে তলিয়ে যায়। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। অবশেষে বন্যার পানি নামার সাথে সাথেই ধানের ফসল বাদ দিয়ে সবজি চাষে মনোযোগী হন। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে তিনি দারিদ্র্যকে জয় করেছেন। তার জমিতে আবাদকৃত ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ, কাঁচামরিচ, বেগুন ও মূলা যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। তার দেখাদেখি এলাকার ইস্তার মিয়া, আল আমিন, নাসির উদ্দিন ও মতিউর রহমানসহ অনেকেই সবজি চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন।
তোফাজ্জল হোসেন জানান, অভাবের তাড়নায় শৈশবেই বাবার সঙ্গে কাজ করতে করতে কৃষিতে হাতেখড়ি। ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় লেখাপড়া হয়নি। কোন রকম পাঠশালার গন্ডি পেরিয়েছি। তারপর থেকেই বাবার সাথে কৃষি কাজে যোগ দেই। প্রতিদিন সকাল-সন্ধা কাজ করতাম। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করে যা সামান্য আয় হতো তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতো পরিবার।
এ বছর তিনি ৮৪ শতক জমিতে ফুলকপি, ২৮ শতক জমিতে বাঁধাকপি, ৫৬ শতক জমিতে মূলা, মালচিং পদ্ধতিতে ২১ শতকে বেগুন, ৫৬ শতকে টমেটো, ৫৬ শতকে মরিচের চাষ করেছেন। এতে তার জমি ইজারা বাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত সবজি বিক্রি করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকার। আরো ৬-৭ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তোফাজ্জল হোসেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা মূলত ধান প্রধান এলাকা হলেও পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এ বছর আলু, মিষ্টি আলু, বেগুন, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ নানান জাতের সবজি আবাদ করা হয়েছে ১৯০ হেক্টর জমিতে। তিনি বলেন, পশ্চিমবাগ কদমতারা গ্রামের মোঃ তোফাজ্জল হোসেন একজন সফল সবজি চাষী। তার আগ্রহ দেখে তাকে প্রদর্শনীর আওতায় আনা হয়।
তিনি মালচিং পদ্ধতিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে লাভের মুখ দেখেছেন। তাকে দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি বিভাগ এ ধরনের উদ্যমী কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে ও নতুন নতুন প্রযুক্তি দিয়ে বরাবরের মত পাশে থাকবে।