নদীর তীরে কুঁড়িয়ে পাওয়া নবজাতকের ঠাঁই হলো বাগবাড়ি ছোটমনি নিবাসে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৫:৫৬:৩১ অপরাহ্ন
মোঃ আবু হেনা, আজমিরীগঞ্জ থেকে: আজমিরীগঞ্জে নদীর তীরে কুঁড়িয়ে পাওয়া নবজাতক কন্যা শিশুর পরিচয় গত পাঁচ দিনেও পাওয়া যায়নি। অবশেষে শিশুটির ঠাঁই হয়েছে সিলেটের ছোট মনি নিবাসে।
উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, শিশুটির ভবিষ্যৎ সুরক্ষা বিবেচনা করে ভরনপোষণের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক এমন দম্পতির সন্ধান চলছে। পেলে হবিগঞ্জের পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া শেষে নতুন অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার সকালে নবজাতক শিশুকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এম্বুলেন্সের মাধ্যমে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও হাসপাতালের নার্সের মাধ্যমে সিলেটের বাগবাড়ি ছোট মনি নিবাসে প্রেরণ করা হয়।
জানা যায়, ভরনপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য দুইজন নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি জুয়েল ভৌমিকের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন।
পরিত্যক্ত অবস্থায় নবজাতক কন্যা শিশুটিকে কুঁড়িয়ে পাওয়া নারী সুরুজ আলীর স্ত্রী আলফিনা বেগম বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে আমি নিঃসন্তান। সোমবার বছিরা নদীর তীরে নবজাতক শিশুটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় কুঁড়িয়ে পাই। উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই নবজাতককে আমার জিম্মায় দিয়েছিল, মনে করেছিলাম আমার সন্তানের আকাঙ্খা শেষ হলো। ওইদিন থেকে আজ পর্যন্ত শিশুটিকে পরিচর্যা করেছি। এমনি তার ভাসুরের স্ত্রী নবজাতক শিশুটিকে বুকের দুধ পানও করান। কিন্তু ওই শিশুটিকে সিলেটে নিয়ে যাচ্ছে বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি শিশুটির ভরনপোষণের দায়িত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুয়েল ভৌমিক বলেন, নবজাতক শিশুকে সিলেটের সোনামনি নিবাসে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত রোববার রাত সাড়ে ৯ টায় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আব্দুল আওয়াল মিয়ার স্ত্রী তমা আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইওসি ভবনে প্রসব ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১১টায় তিনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন এবং নরমাল ডেলিভারীর ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতাল থেকে চলে যান। পরদিন সোমবার সকালে উপজেলা কাকাইলছেও ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের দক্ষিণ দিকে বছিরা নদীর তীরে শিশুটির কান্না শুনে স্থানীয় নারী-পুরুষ সেখানে গিয়ে একটি নবজাতককে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পান। সেখান থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় দয়াল মিয়ার কন্যা আলফিনা বেগমের জিম্মায় দেয়া হয়।
ডেলিভারিতে থাকা এক নার্স জানান, শিশুটি জন্মের পর তাঁর স্বজনরা একবারের জন্যও কোলে নেননি। তিনি ঘণ্টাখানেক কোলে নিয়ে সেবা যতœ করেছেন। তার সাথে সেলফিও তুলেছেন। তিনি আরও জানান, ওই প্রসূতির সাথে তার শাশুড়ি এবং ভাসুর পরিচয় দিয়ে একজন পুরুষ এসেছিল।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, রাতে ওই প্রসূতিকে প্রসব ব্যথা অবস্থায় মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধপত্র হাসপাতালের সামনে তারেক ফার্মেসী থেকে ক্রয় করেন উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের ঘরদাই গ্রামের ওমর আলী নামে এক ব্যক্তি। ঐদিন সন্ধ্যায় আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী শেখ মাসুদুর রহমান নবজাতকটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।