এমসি কলেজ থেকে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেন ৪২ শিক্ষার্থী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৯:৪১:০৩ অপরাহ্ন

লবীব আহমদ :
সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ। এই কলেজ থেকে এ বছর দেশের ১৯টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৪২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জন ছাত্র ও ২১ জন ছাত্রী । গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০২৩-২৪ সেশনের এমবিবিএস প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিষয়টি জানা যায়।
কলেজ সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মুরারিচাঁদ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪৪৪ জন পাস করেন। আর জিপিএ-৫ অর্জন করেন ৩০৬ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে এবার ৪২ জন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে, এই হিসাবের বাইরে আরো কয়েকজন থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গতবছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৫৫ জন, বুয়েটে ১৮জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪ জন ও দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী চান্স পেয়েছিলেন।
এবছর ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন ইখতিয়ার রাহাত (১৭৫ তম), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে আহনাফ আকিফ মাহি (৩৩০ তম), সাবরিনা জামান ফাবিহা (৩৫৫ তম), সিদ্দিকা লিমা (৪৫২ তম), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে সাদিয়া সুলতানা (৭৯৬ তম), মাহফুজুর রহমান নোমান (৯০৪ তম), চমক চৌধুরী (১১৩৭ তম), সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে রাইয়ান ইসলাম (৮২৪ তম), বিদিতা চক্রবর্তী (৮৬২ তম), তাসনিম লতিফ তাজিন (৮৮৪ তম), সায়ন্তি তুসি (৮৮৭ তম), জীবন আহমেদ (৯৩৪ তম), প্রবাল কান্তি দাস (১৭৩২ তম), সালমা আক্তার (১৭৫০ তম), তাসনিম খান (১৭৫৫ তম), আব্দুল করিম (১৯৩৫ তম), শ্রেয়সী চক্রবর্তী সৃষ্টি (৯৩৫ তম), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রিয়ন্তি শিকদার (১৩২৬ তম), বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে তাসফিয়া কাদের রিফাত (২০৩০ তম), এহসানুল হক নাইম, রংপুর মেডিকেল কলেজে ফারজানা সানজিদা (২৪৬৪ তম), মুনতাহা মেহজাবীন হীমা (২৫৫২ তম), দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ফাহমিদা কাদের চৌধুরী (৩৩৫১ তম), অনামিকা দৃষ্টি (৩৩৯৭ তম), নিশাত আহমেদ (৩৪০৪ তম), কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে মাহাথির মোহাম্মদ আবির, টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে আবুল ফজল অমল (৩৯৬৯ তম), জেবা তাহসিন (৪৪৮৪ তম), শাহেদ আহমেদ স্বপন (৪৫৩৮ তম), নাদিরা আনজুম দিনা, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে সিয়াম ইবনে মতিন (৩৯৯৩ তম), গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজে মাহিন আল মাহবুব (৪৪০১ তম), পিণাক দ্যুতি সিনহা (৪৪৩৬তম), নীলফামারি মেডিকেল কলেজে নুসরাত জাহান সাদিয়া, জারিন তাসনিম অথৈ, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে পলি সামন্ত (৪৭২৭ তম), পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে তাহসিনা তাবাসসুম মোনা (৪৮২৫ তম), রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে গোলাম রাব্বি (৪৮৩০ তম), নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজে স্বরূপ দেব সুবিনয় (৪৯২০ তম), সুনামগঞ্জের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে ইকরাম হাবিব, হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে অর্পিতা রায় ও অভিজিৎ আচার্য্য।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে চান্সপ্রাপ্ত ও জাতীয় মেধায় ৩৫৫তম সাবরিনা জামান ফাবিহা বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ডাক্তার হওয়ার প্রবল ইচ্ছে। ২ বছর আগে আমার বড়বোনও এমসি কলেজ থেকে ওসমানী মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন। এজন্য আমি মেডিকেল প্রস্তুতি ছাড়া আর কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতি নেইনি। আমার প্রথম চয়েজ ছিল ঢাকা মেডিকেল আর দ্বিতীয় ছিল সলিমুল্লাহ মেডিকেল। আল্লাহর রহমতে আমি আমার দ্বিতীয় চয়েজেই চান্স পেয়েছি। আমি ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্সপ্রাপ্ত ও জাতীয় মেধায় ১৭৫ তম ইখতিয়ার রাহাত বলেন, আমার প্রথম চয়েজ ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং। আমি একসাথে ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেলের প্রস্তুতি নেই। আমি ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে আমি ২য় হয়েছি। তবে আমি ঢাকা মেডিকেলেই ভর্তি হবো। আমি প্রতিরাতে প্ল্যান করতাম আগামীকাল কি কি পড়বো আর পরেরদিন তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি পড়ার টেবিল থেকে উঠতাম না। আমার পরিশ্রম ও সবার দোয়ায় আমার এ অর্জন।
এবিষয়ে উচ্চমাধ্যমিকের সৃজনশীলের মাস্টার ট্রেইনার ও মুরারিচাঁদ কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশের সহায়কের জন্য প্রয়োজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সমন্বয়। এই তিনের সমন্বয় যদি শিক্ষার্থীর কাছে থাকে, তাহলে সেই শিক্ষার্থী জীবনে সফলতা পাবে, তার মেধার স্বাক্ষর সে বহন করতে পারে। এমসি কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি পরিবেশ সবসময় বহালই থাকে, যে পরিবেশে আমাদের শিক্ষার্থীরা চমৎকার পরিবেশে শিক্ষা অর্জন করতে পারে।
মুরারিচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, এমসি কলেজের শিক্ষার্থীদের সাফল্যে আমি আনন্দিত। এজন্য কলেজের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানাই। ১ শ’ এর উপর হলে আরো বেশি খুশি হতাম। বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা হয়ে গেলে গতবারের ন্যায় এবারও তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আশা করছি সকল শিক্ষার্থীরা নিজ স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এবারও ভালো ভালো জায়গায় চান্স পেয়ে কলেজের সুনাম অব্যাহত রাখবেন এবং আরো বৃদ্ধি করবেন।