নারীর ক্ষমতায়ন এগিয়ে নেয়ার সহযাত্রী দুই ইউপি চেয়ারম্যান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৬:০১:১৫ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স :
তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নেয়ার আন্দোলন থেমে নেই সিলেটেও। অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন দিন দিন সোচ্চার হচ্ছে। এ আন্দোলনের সফল বাস্তবায়নে অপরাজিতাদের সহযোদ্ধা যে ক’জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মনাফ এবং জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মন্তকা আহমেদ।
কথা হলে ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে নারী ও পুরুষের হাত ধরেই পৃথিবী সভ্যতার পথে এগিয়ে চলছে। নারী ও পুরুষ উভয়ই মানুষ, এ দুই স্বত্বার মাঝে যে কারও অধিকার খর্ব হলে ব্যাহত হবে কাঙ্খিত অগ্রগতি। তারা বলেন, আমরা যেমন জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে পরিষদে এসেছি, তেমনি নারী সদস্যরাও জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তারা মনে করেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশ গ্রহণ গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে। এতে স্থানীয় সরকারে নারীর দক্ষতা ও কাজের গুণগত মান আরো বৃদ্ধি পাবে। নারীর অগ্রযাত্রায় তাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা মুকুল বলেন, স্থানীয় সরকারের তৃণমূল প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরি। সুষম উন্নয়নের স্বার্থে বিষয়টির ব্যাপারে চেয়ারম্যানদের মনোনিবেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরিন আক্তার বলেন, সিলেটের সবক’টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাদের পরিষদে নারী বান্ধব হিসেবে কাজ করছেন। পুরুষ ও মহিলা ইউপি সদস্যগণের সমন্বয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রযাত্রায় এটি দৃষ্টান্ত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আব্দুল মনাফ : সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মনাফ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী ইউপি চেয়ারম্যান তিনি। এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত এ ব্যক্তি কাজ করছেন তার পরিষদের নির্বাচিত নারী ও পুরুষ সদস্যদের নিয়ে। তিনি জানালেন, সময়ের বিবর্তনের সাথে এখন নারীর উন্নয়নের বিষয়টিও সামনে আসছে। নারীর সম অধিকার, অংশগ্রহণ ও সাংবিধানিক চেতনাকে রূপ দিতেই স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য পরিষদে সংরক্ষিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ তৈরী হয়েছে। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসাটা নারীর ক্ষমতায়নের পথে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।
চেয়ারম্যান মনাফ বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পরই জানতে পারি অপরাজিতা নেটওয়ার্ক তৃণমূল পর্যায়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করছে। তাদের কর্মকা- দেখে আশ^স্ত হয়েছি, এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে প্রত্যন্ত এলাকাতেও নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের সংবিধান নারী পুরুষের অধিকারকে সমান মর্যাদা দান করেছে, সেহেতু তাদের পিছনে রেখে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। নীতি নৈতিকতার সাথে পথচলা ও সুশিক্ষা নারীর অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করতে পারে বলে উল্লেখ করেন মনাফ। তিনি জানান, তার পরিষদে বিভিন্ন কমিটিতে নারী সদস্যরা সম্পৃক্ত রয়েছেন।
স্থানীয় বিরোধ মীমাংসায় নির্বাচিত নারী সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নারী জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয় সরকারে নারীর অংশ গ্রহণের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান এই ইউপি চেয়ারম্যান।
মন্তকা আহমেদ : মন্তকা আহমেদ জানান, জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলাম। সম্প্রতি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তিনি জানান, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, অবহেলিত হয়ে আসছে। এ বৈষম্যের অবসান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। মন্তকা বলেন, অপরাজিতা নেটওয়ার্ক তার এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনার ফলে নারী জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে রাজনীতিতে নারীর সম্পৃক্ততার স্পৃহা জাগ্রত হয়েছে। অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারে নির্বাচনে সংরক্ষিত আসন ছাড়াও সাধারণ আসনেও নির্বাচন করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, এক সাথে কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন নারীরা সেবা প্রদান আর কর্তব্য পালনে যথেষ্ট নিষ্ঠাবান। এলাকার উন্নয়নে তারা আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্যরা। ইউনিয়ন পরিষদের পুরুষ সদস্যরাও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখেন তাদের। এতে কোন প্রকার বৈষম্যের স্থান তার পরিষদে নেই বলে জানান তিনি।
পশ্চাৎপদ জালালাবাদ ইউনিয়নকে এগিয়ে নিতে সম্মিলিতভাবে অগ্রসর হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি অপরাজিতা নেটওয়ার্কসহ সকল মহলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।