দোয়ারাবাজারে প্রতিপক্ষের নির্যাতনে বাড়িছাড়া ৭ সদস্যের পরিবার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মার্চ ২০২৪, ৩:০৭:০২ অপরাহ্ন
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের পল্লীতে প্রতিপক্ষের অত্যাচার ও নির্যাতনে বাড়িছাড়া হয়েছে ৭ সদস্যদের একটি পরিবার। বসতঘর ভাঙচুর, পুকুরের মাছ ও বৃক্ষ নিধন, নগদ অর্থকড়ি ও মূল্যবান আসবাবপত্র লুটে নিয়ে রক্তাক্ত জখম করে নিরীহ পরিবারকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। সম্প্রতি নির্মম লোমহর্ষক এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের পুরান সিরাজপুর গ্রামে।
স্ত্রী, এক কন্যা ও চার পুত্রসন্তান নিয়ে ওই গ্রামের মৃত ইর্শাদ মোড়লের পুত্র কাঠমিস্ত্রি সিরাজ আলীর সংসার। বাবার মৃত্যুর পর থেকে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের সঙ্গে। শেষে প্রতিপক্ষের নির্যাতন ও গলাধাক্কায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ছেড়ে ৭ সদস্য নিয়ে অন্যের বাড়িতে কোনোমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই করেছে নির্যাতিত পরিবারটি।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় বছর খানেক পূর্বে গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে আব্দুছ ছালাম তার ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা সিরাজ আলীর বাড়ির মিটার থেকে প্রতিদিন চার্জ দিতে বায়না ধরে। সিরাজ আলী এতে রাজি না হলে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আব্দুছ ছালাম ও তার পক্ষের লোকজন। পরে বাড়িঘর ভাঙচুর, গাছ-গাছালি ও পুকুরের মাছ নিধনসহ পরিবারের সবাইকে প্রাণে মারার হুমকি প্রদান করে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিরাজ আলী বাদি হয়ে আব্দুছ ছালামকে প্রধান অভিযুক্ত করে ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে দোয়ারাবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। এতে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে বিবাদি আব্দুছ ছালাম ও তার পক্ষের লোকজন কাঠমিস্ত্রি সিরাজ আলীর বাড়িতে প্রবেশ করে গালমন্দ করে। এসময় সিরাজ আলী ঘর থেকে বের হলে তাকে এলোপাথারি কিলঘুসি ও লাথি মেরে আহত করে। স্বামীকে বাঁচাতে স্ত্রী রাকিয়া বেগম এগিয়ে এলে তাকেও এলোপাথারি কিলঘুষি, লাথি মেরে রামদা দিয়ে বুকের বামপাশে কোপ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
এ ঘটনায় রক্তাক্ত রাকিয়া বেগমকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও তার স্বামী সিরাজ আলীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরদিন আব্দুছ ছালামকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে দোয়ারাবাজার থানায় মামলা নং (০৫/১৯) দায়ের করেন।
তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিয়ার রহমান।
এদিকে, মামলার প্রধান আসামি আব্দুছ ছালামকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান দেয়ার পর জামিনে মুক্ত হন। আর মুক্ত হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি মোবারক আলীর নেতৃত্বে তার ছেলেসহ গ্রামের দাঁঙ্গাবাজদের মারমুখি আচরণে স্ত্রী, কন্যা ও চার পুত্র সন্তান নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান বাদি সিরাজ আলী।
আহত রাকিয়া বেগম জানান, ‘নিজেদের বাড়িঘর হারিয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে আজ পরের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছি। আমাদের বাড়িঘর, আসবাবপত্র ও নগদ অর্থকড়িসহ হারানো সবকিছু ফিরিয়ে দেয়াসহ রক্তাক্ত জখমের পূর্ণ বিচার চান তিনি।’
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিয়ার রহমান জানান, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলার আসামিরা বর্তমানে জামিনে আছেন।