হবিগঞ্জের শংকরপাশা শাহী মসজিদ, সুলতানী আমলের অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মার্চ ২০২৪, ৪:৫৭:০০ অপরাহ্ন
হবিগঞ্জ থেকে মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল: বাংলাদেশে সুলতানী আমলের অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর অন্যতম হবিগঞ্জ জেলার উচাইল গ্রামের শংকরপাশা শাহী মসজিদ। জেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামে ৬ একর বিস্তৃত ভূমিতে একটি টিলার উপর এই মসজিদ অবস্থিত।
হযরত শাহজালাল (রঃ) এর সিলেট বিজয়ের পর তার যে ১২ জন সহকর্মীকে তরফ অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য প্রেরণ করেন,তাদের অন্যতম ছিলেন শাহ মজলিশ আমীন (রঃ)। তিনিই এখানে প্রথম মসজিদ স্থাপন করেন।
পরবর্তীতে মুসলিম বাংলার স্বনামধন্য শাসনকর্তা সুলতান আলাউদ্দিন হোসাইন শাহের (১৪৯৩-১৫১৯) আমলে এই মসজিদের সুদৃশ্য ইমারতটি নির্মাণ করা হয়। ইমারতটি দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ২১ ফুট ৬ ইঞ্চি করে। বারান্দা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। মূল ভবনের উপর একটি বড় গম্বুজ এবং বারান্দার উপর অপেক্ষাকৃত ছোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। দরজা জানালার সংখ্যা মোট ১৪টি । জানালাগুলো অনেকটাই দরজা আকৃতির। তিন দিকের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ৫ ফুট। পশ্চিম দিকের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় দ্বিগুণ। সামনের প্রাচীরের কার্নিশ ও উপরের ছাদ নির্মিত হয়েছে বাঁকানো ভাবে। প্রধান কক্ষের চারকোণে আর বারান্দার দুই কোণে মোট ৬টি কারুকার্য শোভিত স্তম্ভ রয়েছে।
সুলতানী আমলের স্থাপত্যরীতি পূর্ণাঙ্গ রূপেই প্রকাশ পেয়েছে এই ইমারতে। ইমারতে উন্নতমানের পোড়া ইট কেটে প্রলেপবিহীন দেয়ালে সেটে শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যে সুষমামন্ডিত কারুকার্য সহজেই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দেয়ালের বাইরের দিকে ইটের উপর বিভিন্ন নক্সা এবং অলংকরণ, শীলালিপি কালের চক্রে বিনষ্ট হয়ে গেছে। স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যে অনন্য এই মসজিদ ভবনের রক্তিম রং সকলকে বিমোহিত করে।
মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে শাহ মজলিশ আমীন (রঃ) এর মাজার। পাশেই বড় দীঘি। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন মানত নিয়ে এখানে হাজির হয়। যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ এর অভাবে দীর্ঘ দিনের এই প্রাচীন মসজিদের সৌন্দর্য্য অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি এডভোকেট শামীম আহমেদ জানান, ইদানিং সরকারি অনুদান ও স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় মসজিদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিকল্পে উন্নয়ন কাজ চলছে। এই ঐতিহাসিক মসজিদ এলাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করণ ও একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করা আশু প্রয়োজন বলে জানান তিনি।