অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ
হবিগঞ্জে নিয়ন্ত্রণে আসছে না অবৈধ হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মার্চ ২০২৪, ২:৩২:৩৬ অপরাহ্ন

হবিগঞ্জ থেকে মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল : হবিগঞ্জে একের পর এক অপচিকিৎসার ঘটনার পরও বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। যে কারণে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সাধারণ মানুষ। গত ১০ বছরে জেলার বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র গড়ে উঠছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকা, বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোর অধিকাংশেই রোগীদের নিরাপদ আবাসন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স ও ল্যাব টেকনিশিয়ানসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকা সত্ত্বেও তারা ‘গলাকাটা’ রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে স্বাস্থ্যবিভাগ ভূয়া চিকিৎসক, নার্সদের অপচিকিৎসার আলামত পেয়েও তাদেরকে দমন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে আইনভঙ্গকারীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও শনিবার ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ থেকে কয়েক ডজন চিকিৎসক স্থানীয় পত্রিকায় ক্লিনিকের নামে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে কিংবা মাইকিং ও দালালের মাধ্যমে নিজেদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে জাহির করে রোগীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দেশের নাম ও ডিগ্রী এবং সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উল্লেখ করা হয়। এ সকল চিকিৎসকের দ্বারা প্রায়ই নারী-শিশুসহ অনেক রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হন। একারণে প্রায়ই মামলা মোকদ্দমাও দায়ের করা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন ক্লিনিকে দালালের মাধ্যমে রোগী আনার জন্য রয়েছে নির্ধারিত রিক্সা, অটো রিক্সা ও মাইক্রোবাস এবং বর্ষাকালে নৌকা। এসমস্ত যানবাহনের চালক প্রতি রোগী এনে দেয়ার জন্য নির্ধারিত কমিশন পায়। আবার অনেক ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় অন্য ক্লিনিকে কর্মরত চিকিৎসককে ডেকে আনা হয়। ইদানিং হবিগঞ্জে একশ্রেণির বিত্তশালী মানুষ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নির্মাণ করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রবণতায় লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ১৩১টি বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিক রয়েছে। তন্মধ্যে ৩৫টি হাসপাতাল, ৯০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ৬টি ডেন্টাল ক্লিনিক। ২০২২-২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী এগুলো মধ্যে ২৪টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্সসহ কাগজপত্র সঠিক রয়েছে। ৩৪টি লাইসেন্স এর জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। আর বাকী হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে কোনটির লাইসেন্স থাকলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান কিংবা পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। আবার কোন কোনটি আবেদন করেই সেবাদান কার্যক্রম চালু করেছে।
সূত্র জানায়, অর্ধেক এর বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেরই কাগজপত্রে রয়েছে ত্রুটি। জেলা সদরে ৫৬টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ৩৯টির লাইসেন্স এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও নবায়ন করা হচ্ছে না। কিন্তু নবায়ন না করে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। লাইসেন্স বা নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯টি। তন্মধ্যে স্বাস্থ্যবিভাগ ৩টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, মানহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুখলিছুর রহমান উজ্জ্বল জানান, বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়মানুযায়ী যাতে পরিচালিত হয় সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ তৎপর রয়েছে। এজন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
সিভিল সার্জন ডা. নুরুল হক জানান, সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে।