সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
বিশ্বনাথে আসামির এনআইডিতে ভুয়া পিতৃপরিচয়, হয়রানির শিকার বৃদ্ধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মার্চ ২০২৪, ২:৫২:৫২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বনাথ উপজেলায় মিথ্যা পিতৃপরিচয় দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বানিয়েছেন মো. মাহবুবুল আলম জনি নামের এক ব্যক্তি। নানা অপরাধ কর্মকা-ে জড়িত এই ব্যক্তির অপকর্মে হয়রানির শিকার হচ্ছেন মো. আব্দুল খালিক নামের ৬৪ বছর বয়সী ব্যক্তি ও তার পরিবার।
এ অবস্থায় প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলার একাভীম (গহরপুর) গ্রামের ধীতপুর মৌজার মরহুম সোনা উল্লার পুত্র মো. আব্দুল খালিক। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে মো. খালিক বলেন, ‘আমার গ্রামে আমি ছাড়া আমার বয়সী বা আমার সমসাময়িক মো. আব্দুল খালিক নামের কোনো মানুষ নেই। আমার স্ত্রীর নাম সোনারা বেগম। স্ত্রী গর্ভজাত এবং আমার ঔরসজাত ৩টি সন্তান, তারা হচ্ছেন- মেয়ে রাহেলা বেগম ও সাহেলা বেগম এবং ছেলে আবুল মবিন কিবরিয়া। সোনারা বেগম ছাড়া আমার অন্য কোনো স্ত্রী নেই ও আত্মীয়ও ছিল না এবং আমি জীবনে অন্য কোনো মহিলাকে বিয়েও করিনি।’
মাহবুবুল আলম জনি জালিয়াতি করে তাকে পিতা পরিচয় দিচ্ছেন দাবি করে আব্দুল খালিক বলেন, ‘আমাদের গ্রামে বসবাসকারী পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন মো. মাহবুবুুল আলম জনি ও তার স্ত্রী মোছা. রফনা বেগম জালিয়াতি, মিথ্যা পরিচয় ও ভূমিদস্যুতাসহ নানা অপরাধ অপকর্মে জড়িত। জনি জালিয়াতির মাধ্যমে তার পিতার নামের স্থলে আমার নাম ব্যবহার করছেন। এ ঘটনা আমাকে সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছে।’
তিনি বলেন, ‘অপকর্মের দায়ে জনির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে এবং সে একাধিকবার জেলও খেটেছে। বর্তমানে স্ত্রীসহ তার বিরুদ্ধে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় জালিয়াতি, চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক মামলা চলমান। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলায় দুইবার জেল খেটেছে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘জনি নিজের বাবার নামের জায়গায় আমি আব্দুল খালিকের নাম ব্যবহার করে ভুয়া তথ্যে তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি নং-২৩৬৮৪৯২৯০২) করেছে। একাধিক মামলায় তার পিতার নামের স্থলে আমার নাম রয়েছে। জাল দলিলাদি সৃষ্টি করে মানুষের জায়গা জমি জবরদখলসহ লোকজনকে নানাভাবে হয়রানির ক্ষেত্রেও সে আমার নাম ব্যবহার করছে।’
জনির এসব অপকর্ম ও দৌরাত্ম্যে খালিক নিজের পরিবার ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় জনি আমার সন্তান না হয়েও আমাকে পিতা দাবি করছে। এমনটা চলতে থাকলে আমার মৃত্যুর পর সে এবং তার কথিত মা হেনা বেগম উত্তারধিকারী সেজে আমার সম্পত্তিতে অংশীদার হওয়ার আইনি দাবি করতে পারে।’
জনির অপরাধের দায়ে পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার ও তার স্ত্রীর মামলা মোকদ্দমা ও দলিলাদি নিয়ে পিতার পরিচয়ে আমাকে অপমান জনিত নানা ভোগান্তি ও আইনি হয়রানির শিকার হতে হয়। পুলিশ তাকে খুঁজতে গিয়ে অনেক সময় আমার বাড়ি-ঘরে হানা দেয়।’
জনির পিতৃপরিচয় নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে খালিক বলেন, ‘স্বামী ত্যাগী হেনা বেগম নামের নিঃসন্তান এক মহিলা গ্রামে বসবাস করতেন। প্রায় ৪০ বছর আগে আমাদের গ্রামের মাজারে তৎকালীন সময়ে আধপাগল এক মহিলা আসা-যাওয়া করতো। হঠাৎ এক নবজাতক পুত্রসন্তান মাজারের কাছে ফেলে গেলে হেনা বেগম তাকে নিজের কাছে নিয়ে লালনপালন করেন।’
জনি নিজেকে আব্দুল খালিকের পুত্র পরিচয় দিয়ে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে একটি সিআর মামলা করলে তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আদালত তা খারিজ করে দেন। এই মামলার বিবাদী আশরাফুজ্জামান আইজ্যাক পরবর্তীতে জনির বিরুদ্ধে জিআর মামলা করেন। মামলায় তার দেয়া তথ্যে আমাকে তার পিতা সাজানো হয়। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষয়ে গত ২৪ মার্চ নোটারী পাবলিকে এফিডেভিট করে বিষয়টি তিনি ঘোষণা দেন বলে জানান খালিক। মাহবুবুল আলম জনির জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করতে এবং তার অন্যান্য জালিয়াতি ও অপরাধের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।