জকিগঞ্জে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি, ১০ ডাকাতের যাবজ্জীবন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৭:৫৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটের জকিগঞ্জে সৌদি আরব প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ১০ ডাকাতকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ২ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামীকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক শায়লা শারমিন এ রায় দেন। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. কবির হোসেন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছেন- জকিগঞ্জ থানার সাতঘরি হিলাবাজের আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুস শহিদ (৩২), একই থানার মজলি গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে সেলিম (৪০), শরীফাবাদের মৃত মাহমুদ আলী উরফে মকই মিয়ার ছেলে হেলাল উদ্দিন (৪৮), একই এলাকার মখলিছুর রহমানের ছেলে জামাল উদ্দিন উরফে কাটা জামাল (৪০), ভরন সুলতানপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম আলীর ছেলে আহমদ সাবু উরফে সাবুল (২৮), কানাইঘাট থানার জয়পুর গ্রামের গোটাই মিয়ার ছেলে ছয়ফুল আলম (৩৫), জকিগঞ্জ থানার চাঁনপুর গ্রামের আব্দুল মানিকের ছেলে আব্দুল আহাদ (৩৫), তার সহোদর ভাই আব্দুস সামাদ উরফে বদরুল (৩০), একই থানার খাসেরা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মজু (৩০) ও বিয়ানীবাজার থানার বরইআল গ্রামের ইলিয়াস আলীর ছেলে মো. সোনা মিয়া ওরফে সোনা উল্লাহ (৫৮)।
এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামী মজু, আব্দুস শহিদ, আহমদ সাবু উরফে সাবুল, জামাল উদ্দিন উরফে কাটা জামাল, সোনা মিয়া উরফে সোনা উল্লাহ কারাগারে রয়েছেন। বাকী ৫ আসামী বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- জকিগঞ্জ থানার চাঁনপুর (দরিয়াপুর) গ্রামের মৃত ওহাব আলীর ছেলে রাজু আহমদ ও একই থানার হাড়িকান্দি গ্রামের মৃত সবু মিয়ার ছেলে আলী আহমদ (৩০)।
আদালত ও মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে জানা গেছে, জকিগঞ্জ থানার ৬নং সুলতানপুর ইউনিয়নের ইলাবাজ (সাতঘরি) গ্রামের মৃত আছদ্দর আলী তাপাদারের ছেলে প্রবাসী ফজলুর রহমান তাপাদার ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে বাড়িতে আসেন। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি বুধবার রাত ১১ টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে পরিবার নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
ওইদিন (১০ জানুয়ারি) রাত ২ টার দিকে ফজলুর রহমান এর কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ৫/৬ জনের মুখোশধারী ডাকাতদল আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হানা দেয় এবং পরে তার ভাই ফারুক আহমদ তাপাদারের কক্ষে ডাকাতদল প্রবেশ করে এবং পরিবারের লোকজনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর আহত করে। এসময় ডাকাতরা পুরো পরিবারের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৬৫ হাজার টাকা, সাড়ে ১৬ ভরি স্বণালংকার ও একটি মোবাইলসহ মোট ৯ লাখ ৮০ হাজার ৫ শত টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
তখন পরিবারের মহিলা ও ছেলে-মেয়েরা কান্নাকাটি আরম্ভ করলে ডাকাতদল পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়লে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ঘরের দেয়ালে গুলি পড়ে যায়। গুলির শব্দে গ্রামের লোকজন এগিয়ে আসলে ডাকাতদল পালিয়ে যাওয়ার সময় ৪টি তাজা গুলি উঠানে ফেলে যায়। এ ঘটনায় ফারুক আহমদ তাপাদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫/১৬ জনকে আসামী করে জকিগঞ্জ থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৬ (১৭-০১-২০১৩)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ৩১ আগস্ট জকিগঞ্জ থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম ১২ জনকে আসামী করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-১১০) দাখিল করেন এবং ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল ওই ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য শুরু করেন।
দীর্ঘ শুনানী ও ৯ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত আসামী আব্দুস শহিদ, সেলিম, হেলাল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন ওরফে কাটা জামাল, আহমদ সাবু ওরফে সাবুল, ছয়ফুল আলম, আব্দুল আহাদ, আব্দুস সামাদ উরফে বদরুল, মজু ও মো. সোনা মিয়া ওরফে সোনা উল্লাহকে ১৮৬০ সালের দ্যা পেনাল কোড এর ৩৯৫ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। এছাড়া এ মামলার আসামী রাজু আহমদ ও আলী আহমদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুছ ছাত্তার ও এপিপি এডভোকেট দীনা ইয়াছমিন এবং আসামীপক্ষে এডভোকেট আব্দুল খালিক, এডভোকেট কিবরিয়া ও এডভোকেট জয়নাল আবেদীন মামলাটি পরিচালনা করেন।