প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
বিভিন্ন দাবিতে আইডিইবি’র মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৪, ২:৩১:০১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পদোন্নতির কোটা ৫০ ভাগে উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-১২ থেকে ১৮ মে বিভিন্ন সংগঠন ও সমাজের বিশিষ্টজনের সাথে মতবিনিময় ও অবহিতকরণ, ১৯ থেকে ২৩ মে জেলার সকল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভিস এসোসিয়েশনের উদ্যোগে স্ব স্ব প্রধান দপ্তরে প্রতিবাদ সভা এবং ২৫ থেকে ২৮ মে ছাত্র-শিক্ষক ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান।
গতকাল শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে আইডিইবি সিলেট জেলা শাখা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন আহমেদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তাদের ৪ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পদোন্নতির কোটা ৫০ ভাগে উন্নীতকরণ ছাড়াও তাদের অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক নিযুক্তিতে অন্যান্য পেশাজীবীর ন্যায় একটি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট, পরিকল্পনা ও নকশা বিভাগে কর্মরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলীদেরকে সহকারী প্রকৌশলীদের ন্যায় ৩টি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদান এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণদের ক্রেডিট ওয়েভার দিয়ে ২ বছরে ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করার সুযোগ প্রদান। তারা অবিলম্বে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নেরও জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের পর দেশের উচ্চ সুবিধাভোগী স্বার্থবাদী ডিগ্রি প্রকৌশলী ও তাদের সংগঠনের পক্ষে মারাত্মকভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে তারা উদ্ভট ও মুর্খদের কাজ বলেও মন্তব্য করেছে। এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উভয়েই ইঞ্জিনিয়ার, যা রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা বিএসসি (পাস) সমমান মর্যাদা পাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, বিএসসি (পাস) কোর্সের গণিত, পদার্থ ও রসায়ন বিষয়গুলো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সে বিদ্যমান এবং অন্য বিষয়গুলোর সাথে ইন্টার লিংক রয়েছে। বাংলাদেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটি এসএসসি পাস শিক্ষার্থীদের জন্য ৪ বছর বা ৮ সেমিস্টার, এইচএসসি (বিজ্ঞান) শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ বছর বা ৬ সেমিস্টার এবং এইচএসসি ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য আড়াই বছর বা ৫ সেমিস্টার। এই প্রোগ্রামে ন্যূনতম স্কুলিং ১৪ বছর। এইচএসসি ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের স্কুলিং সাড়ে ১৪ বছর এবং এইচএসসি (বিজ্ঞান) শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫ বছর। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে ডিগ্রি প্রোগ্রামের ইয়ার অব স্কুলিং সর্বনি¤œ ১৪ বছর (ফার্স্ট ট্রাক ডিগ্রি)। তাই একাডেমিক বিষয় বিবেচনায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিএসসি (পাস) কোর্সের সমমান মর্যাদা প্রদানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সময়োপযোগী বলে আমরা মনে করি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত ও বৈশ্বিক কর্মবাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। এজন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ভর্তির হার ২০৩০ সালে ৩০% ও ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০-৬০% এ উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি বাস্তবায়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে শিক্ষার মূলস্রোতধারায় নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়ে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ১০০ নম্বরের কারিগরি বিষয় বাধ্যতামূলক করেছে। অন্যদিকে, সকল মাধ্যমিক ও দাখিল মাদ্রাসায় ৯ম-১০ম শ্রেণীতে ন্যূনতম ২টি করে টেকনোলজিতে এসএসসি (ভোক) কোর্স চালু করে কারিগরি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এছাড়া, পুরাতন ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সাথে যুক্ত হয়ে ১০০টি নতুন টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ চালু করেছে। অবশিষ্ট ৩২৯টি উপজেলার প্রতিটিতে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের জন্য সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকার দ্বিতীয় বৃহত্তম মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করে কাজ শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, দেশে চালু ৫০টি সরকারি পলিটেকনিকের শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করা ও দক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার গড়ে তোলার লক্ষ্যে সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষক পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ শুরু করেছে। অন্যদিকে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের আরো সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক পদ সৃষ্টিপূর্বক একইভাবে নিয়োগ দেয়া শুরু করেছেন। বিশ্ব কর্মবাজারের উপযোগী দক্ষ জনবল তৈরীর লক্ষ্যে এ শিক্ষায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি প্রকৌশলী মো. নজরুল হোসেন, সিলেট জেলা শাখার সভাপতি প্রকৌশলী মাহমুদুর রশীদ মসরুর, সহ-সভাপতি প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা চৌধুরী ও প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ খালেদুর রহমান, অর্থ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. সামছুল আলম প্রমুখ।