স্বপ্নের ঠিকানায় ভাগ্য বদলেনি সনতেরাদের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০২৪, ৬:১৬:৪০ অপরাহ্ন
আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে :এক টুকরো ভিটেমাটি। ছোট্ট একটা ঘর। একটু ছায়া। আর একটু মায়া। সব মানুষেরই বোধ হয় চিরায়ত স্বপ্ন। একসময় এমন স্বপ্নই অধরা ছিল কোম্পানীগঞ্জের সাতাশ পরিবারের। যাদের ছিলো না মাথা গোঁজার ঠাঁই। ছিলো না কোনো জমি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে তাদের মুখে ফুটেছিল হাসি। কিন্তু বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে উবে গেছে তাদের মুখের হাসি। ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষগুলোর বেঁচে থাকার ঠাঁই হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ভাগ্য বদলেনি।
বলছি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চন্দ্রনগরে স্থাপিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের কথা।
মুজিববর্ষে এখানে একত্রে ২৭টি ঘর তৈরি করে নাম দেওয়া হয় ‘মুজিবনগর’। এখানে পুনর্বাসিত হয় ভূমিহীন-গৃহহীন ২৭টি পরিবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে নিচু জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করায় বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মুজিবনগরের সবগুলো ঘর পানিতে ডুবে আছে। শুধু টিনের চালা ও ঘরের জানালা টুকু বোঝা যায়। পানিতে ডুবে যাওয়ায় বাসিন্দারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে সনতেরা ও আছারুন নামে দুই বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তারা উত্তর কলাবাড়ি গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন। তারা জানান, তিন বছর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছি। তখন থেকেই দেখছি পানি এলেই ঘর ডুবে যায়। এবার বন্যার শুরুতেই ঘরগুলো ডুবে গেছে। দুই সপ্তাহ হয় আশ্রয়ণ ছেড়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ নেয়নি। রাখাল বিশ্বাস নামে এক বাসিন্দা বলেন, আমরা খুব কষ্টে আছি। বিশুদ্ধ পানি নাই। খাবার নাই, থাকার জায়গা নাই। ঘরবাড়ি ভাঙা। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখি থাকার জায়গা নেই। আরেকজনের ভাঙা-চাঙা ঘরে থাকিয়া কোনো রকম জীবন রক্ষা করতেছি। কী করব কিছু বুঝতেছি না।
আলি আকবর নামের আরেকজন বলেন, আমার ঘরের কম্বল ও থালা-বাসন কিছুই নাই। সবকিছুই পানিতে ভেসে গেছে। এখন কোথায় রান্না করব আর কী খাব। এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য পাইনি। মুজিবনগরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন,এই মুজিবনগর সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। এখানে থাকার কোনো পরিবেশ নাই। স্বাভাবিক পানিতেই এটি তলিয়ে যায়।
মুজিবনগরে ঘর বরাদ্দ পাওয়া রহিম, লীলমণি বিশ্বাস, গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, কার্তিক বিশ্বাস ও সুবল চন্দ্র বিশ্বাসসহ কয়েকজন জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়েও আমাদের মতো গরিবের কোনো উপকার হলো না। কষ্টই আমাদের নিত্যসঙ্গী।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, এখানে আমার যোগদানের আগে ঘরগুলো হয়েছে। জায়গাটি নিচু হওয়ায় বর্ষা এলেই ডুবে যায়। বর্তমানে এখানকার পরিবারগুলো বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে খুঁজে বের করে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।