নগরীতে তালামীযে ইসলামিয়ার র্যালি
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২:২৯:২৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : আজ সোমবার, ১২ই রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। এ দিন বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী রহমাতুল্লিল আলামিন সাইয়েদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন তাজদারে মদীনা জগৎকূল শিরোমণি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শ’ বছর পূর্বে ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে এ দিনের সুবহে সাদেকের সময় মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আসেন এই ধরায়। জন্মের পূর্বেই তিনি পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃ¯েœহ থেকে। অনেক দুঃখ-কষ্ট আর অসীম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে ওঠেন তিনি। চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নবুওতের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। অসভ্য, বর্বর ও পথহারা মানব জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু, অসভ্য-বর্বর আরব জাতি তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসুলের (সা.) উপর নির্যাতন শুরু করে। বিভিন্নমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তাঁর সাথী হতে থাকেন।
অন্যদিকে, কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা রাসুল (সা.) কে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাসুল (সা.) আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেন এবং ‘মদীনা সনদ’ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। ‘মদীনা সনদ’ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদী, খ্রীষ্টান, মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় সমান্তরালে । ২৩ বছর শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসুলে পাক (সা.) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো, তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হলো। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাঁকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পন্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার বহুল আলোচিত দ্য হান্ড্রেড গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্থান দিয়েছেন। ব্রিটিশ মনীষী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, ‘এই অশান্ত পৃথিবীতে তার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন।’ তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবী জুড়ে সুখের সুবাতাস বইতো। তাঁর আগমনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে। প্রতি বছর ১২ই রবিউল আউয়ালকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করে মুসলিম বিশ্ব। এ উপলক্ষে জমায়েত হয়ে রাসুল প্রেমিকরা নবীজীর জীবন ও জীবনী আলোচনা করেন এবং কাসীদা পড়ে থাকেন। মিষ্টি খাবার প্রভৃতি তৈরি করে বিতরণ করেন কেউ কেউ। রাসুল প্রেমিকরা ভক্তিভরে দরুদ পাঠে মশগুল থাকেন। প্রাণের আবেগ মেখে পড়েন ‘বালাগাল উলা বিকামালিহি/কাশাফাত দুজা বিজামালিহি/হাসুনাত জামিউ খিসালিহি/সাল্লু আলাইহি ওয়ালিখি’।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাসুল (সা.)-এর সীরাতের উপর আলোচনা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। আজ সরকারী ছুটি থাকবে।
বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সিলেটে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করে। ‘মুবারক র্যালি’ নামে এই র্যালিতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অংশ নেয়। গতকাল রোববার বেলা দুইটার দিকে মহানগরীর সোবহানীঘাট এলাকার শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসা থেকে র্যালিটি শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক পদক্ষিণ করে। এসময় প্রিয়নবীর শানে রচিত কালজয়ী নানা কবিতার শ্লোক অঙ্কিত নানা রঙের ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড র্যালিতে শোভাবর্ধন করে। ছাত্রজনতার সুরে সুরে ধ্বনিত হয় প্রিয়নবীর প্রশংসাগীতি।
র্যালিপূর্ব র্যালি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এস এম মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব হোসাইন আহমদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মুফতি গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল-ইসলাহ মহাসচিব মুফতী একেএম মনোওর আলী, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুবুর রহমান ফরহাদ, আল-ইসলাহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ হাসান চৌধুরী, ড. মঈনুল ইসলাম পারভেজ, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, আল-ইসলাহর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা, মাওলানা আবু জাফর মুহাম্মদ নুমান, মুফতী বেলাল আহমদ, মাসিক পরওয়ানা সম্পাদক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ফখরুল ইসলাম, মনজুরুল করিম মহসিন, মুহাম্মদ উসমান গণি, সোলায়ান আহমদ চৌধুরী, জাহেদুর রহমান, আতিকুর রহমান সাকের প্রমুখ।