বিএনপির রাজনীতিতে আলোকিত এক নাম হুমায়ুন কবির
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৬:২৬:০৭ অপরাহ্ন
নজরুল ইসলাম বাসন :
বেশ কয়েক বছর পর হুমায়ুন ভাইয়ের সাথে দেখা (হুমায়ুন কবির, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা, কারেন্ট ফরেন এফেয়ার্স বিষয়ক এডভাইজার)। হুমায়ুন ভাই সেই আগের মতই আছেন, সেই সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ, করমর্দন করে স্বভাবসুলভ ভাষায় বল্লেন, চলুন পপলারের ক্যাফেতে গিয়ে বসি, আজ আমরা একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো। রোববারের (১৯/১০/২৫) এক বৃষ্টিস্নাত সকালে পপলারের সেই পরিচিত ক্যাফেতে গিয়ে আমরা বসলাম। আমাদের সাথে অনুজ প্রতীম জুবায়ের, যিনি আইন শাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডনে আছেন।
টাওয়ার হ্যামলেটসে আমার বসবাস প্রায় ৪০ বছরের উপরে। তাই হুমায়ুন ভাই আমার দীর্ঘদিনের চেনা, তার লেখাপড়া স্টুয়ার্ড হেডলাম স্কুল ও পরে স্টেপনিগ্রীন স্কুলে। স্কুলের পড়ালেখা করে হুমায়ুন ভাই সাসেক্স ইউনিভার্সিটি, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস, ক্যাম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি, লীডস ল’স্কুল থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনীতি, ম্যানেজমেন্ট এবং আইন শাস্ত্রে গ্রাজুয়েশন এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে জিএমপি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত আছেন। কথায় কথায় অনেক কিছু জানলাম। তাঁর ভাষায় লিডার তারেক রহমানের ডাকে তিনি মাতৃভূমির জন্যে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তিনি এখন থেকে বাংলাদেশেই থাকবেন বলে জানালেন।
তাঁকে যেভাবে দেখেছি :
আমি যখন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলাম তখন বর্তমান মেয়র লুৎফুর রহমান কাউন্সিল লিডার এবং হুমায়ুন কবির লেবার পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেই সময় থেকে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে আসতেন, তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হলে অমায়িক হাসি দিয়ে কথা বলতেন। তাঁকে আমি একজন সজ্জন এবং স্মার্ট ভদ্রলোক হিসেবেই সব সময় দেখেছি।
আমার যতটুকই জানা, হুমায়ুন কবিরের বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবন রয়েছে। ক্রমান্বয়ে তিনি ৩ জন সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট অফিসে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রাইভেট অফিসে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি লুইসাম কাউন্সিলের নির্বাচিত নির্বাহী মেয়রের এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং লন্ডন মেয়রের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
হুমায়ুন কবির বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেন তখন থেকেই তিনি জাতিসংঘ, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে সভা-সেমিনারে যোগ দিতে থাকেন। বিএনপির এ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সাহচর্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি আন্তর্জাতিক পরিসরে বিএনপির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে ই মেইলে তিনি তার সভা-সেমিনারের তথ্য আমার সাথে শেয়ার করতেন। আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বাইরে একটি পেশাগত সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল। আমিও কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করতাম।
শীর্ষ পর্যায়ের বিশ্বসভায় হুমায়ুন কবির :
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহম্মদ ইউনুছ ও বিএনপির এ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা ড: মুহম্মদ ইউনুছ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে হুমায়ুন কবিরকে তাঁর সফরসঙ্গী করে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন সভায় অংশ নেন।
অতি সম্প্রতি ঢাকায় জাতিসংঘের দূতের সাথে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুমায়ুন কবিরকে এই বলে পরিচয় করিয়ে দেন যে, জনাব কবির এখন থেকে বাংলাদেশে থাকবেন। জাতিসংঘের দূত প্রতি উত্তরে বলেন, হ্যা আগামীতে সিলেট থেকেই ফরেন মিনিস্টার আসবেন।
খোলামেলা কথাবার্তায় হুমায়ুন কবির :
ফিরে আসি আমাদের খোলামেলা আলোচনায়, ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছিলাম, হুমায়ুন ভাই হাসিখুশি মুখে অনেক কথাই বলছিলেন। লিডারের স্নেহের আদরের কথাও তিনি কৃতজ্ঞতার সুরে বলছিলেন (তারেক রহমান সাহেব)।
তিনি সহজ কথায় আমাকে ইঙ্গিত দিয়ে বল্লেন, আমি নিজে নির্বাচন করি বা না করি এটা বিষয় নয়। আমাদের কাছে আমাদের দল বড়, দলকে বিজয়ী করতে হবে, নির্বাচনের আগে ও পরে আমি লিডারের সাথে জাতীয় পর্যায়ে সহযোগীর ভূমিকায় তার নেতৃত্বে কাজ করবো। এটাই হচ্ছে আমার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।
লিডারও আমাকে এই নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি আগেই বলেছি আমার ব্যক্তির এমপি বা মন্ত্রী হওয়ার উপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে না। তাই নির্বাচনের পরে সরকার গঠন হওয়ার পর লিডার আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন সেটাই আমার কাছে বড় কথা, এখন আমি লিডারের নেতৃত্বে কাজ করব, আমার আর কোন ব্যক্তিগত এজেন্ডা নেই।
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ছায়া :
কথায় কথায় আমি তাঁকে মনে করিয়ে দিলাম আমাদের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের কথা। তিনি দুটি ভাষায় কথা বলতেন ইংরেজি ও সিলেটী ভাষায়। আপনার মধ্যেও এরকম একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তিনি হেসে হেসে বল্লেন, আমি সিলেটে জন্মেছি, দেড় বছর বয়সে লন্ডন চলে এসেছি, বড় হয়েছি লন্ডনে। তাই আমিও অভ্যস্ত এই দুই ভাষায়। তবে বর্তমান আধুনিক বিশ্বে ইংরেজি ভাষা ও আইটিতে পারদর্শী না হলে কেউ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। আমরাতো বৃটেনে এই প্রতিযোগিতায় ইতোমধ্যে জয়ী হয়ে এসেছি।
আমি বললাম আপনি বিশ্বনাথে এক জনসভায় বলেছেন, আমি বলয় টলয় বুজিনা, আমরা শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিএনপি করি। বিএনপি দেশ ও জাতির উন্নয়নের রাজনীতি করে। এখানে কার কোন বলয় এটা আমি বুজিনা। আমি তাঁকে বললাম আমাদের প্রয়াত সাইফুর রহমানও খুব স্পষ্টবাদী ছিলেন, তিনিও এভাবে কথা বলতেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর উপদেষ্টা পরিষদ এবং পরে মন্ত্রীসভাতে ছিল যোগ্য মানুষের তারকার মেলা। সাইফুর রহমান ছিলেন এ রকম একজন তারকা, তাঁর অবর্তমানে সিলেট এ রকম একজন নেতা চায়।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার মন্ত্রীরা :
শহীদ জিয়ার কেবিনেটে ছিলেন তারকারা। তার কেবিনেটের দুইজন উপদেষ্টার কথাই বলি। একজন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর শামসুল হক, তিনি ছিলেন ফরেন এডভাইজার। বৃটেনে পড়াশোনা করা সিএ মরহুম সাইফুর রহমানকে বাণিজ্য উপদেষ্টা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া।
শেখ মুজিবের ভ্রান্ত জাতীয়করণ নীতি দেশের ব্যাংক, বীমা, শিল্পকারখানা তার দলের লোকদের হাতে চলে যায়। শুরু হয়েছিল লুটপাট।
শহীদ জিয়ার বিএনপি সরকার দেশে প্রাইভেট সেক্টরকে বিকশিত করার সুযোগ দেয়। গার্মেন্টস শিল্প ঐ সময় গড়ে উঠে। ইসলামী দেশগুলোর সাথে শহীদ জিয়া সম্পর্ক গড়ে তুলেন। আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্যে সার্ক গঠনের সূচনা তখন থেকেই শুরু হয়। বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদে জাপানকে হারিয়ে সদস্যপদ লাভ করেছিল, শহীদ জিয়ার সময় এটা ছিল বিরাট অর্জন। খাল খনন, গ্রাম সরকার, যুবকমপ্লেক্স, মহিলা সংস্থা, শিশু সংস্থা, যুব সংস্থা ছিল শহীদ জিয়ার আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ। স্বৈরাচারী এরশাদ ৯ বছরে বিএনপির এসব অর্জন ধ্বংস করে দেয়। বিএনপি ও জোটের আন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতন হয়।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে জনগণের বিপুল সমর্থনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসে। দেশনেত্রী বেগম জিয়ার সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসাবে মরহুম সাইফুর রহমান ভ্যাট প্রবর্তন করেন। অর্থনৈতিক সংস্কার করেন। তিনি সারাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সিলেট বিভাগের উন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসলে হুমায়ুন ভাইর মতো লোকেরা এদিকে নজর দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
সিলেট বিভাগ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সাইফুর রহমানের নীতি অনুসরন করা দরকার :
১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আমলে ফ্রি প্রাথমিক শিক্ষা ও মহিলাদের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ফ্রি শিক্ষা দেয়া চালু করেন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। তার আমলেই সিলেট বিভাগ বাস্তবায়ন করা হয়।
এম সাইফুর রহমান সিলেটে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, সেতু, হাইওয়ে নির্মাণ করে বিএনপি’র আমলে যে উন্নয়ন হয় তার মডেল রেখে গেছেন। তিনি পরিবেশ সচেতন ছিলেন। টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওরকে জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর অবর্তমানে সিলেটের চা বাগানগুলো ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। বালু ও পাথর আপাতত রক্ষা হয়েছে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কি হবে কে জানে।
তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ থিংক ট্যাংক :
তারেক রহমান প্রায় দেড় দশক ধরে লন্ডনে বসবাস করার ফলে, এনভায়রনমেন্ট, হেলথ, এডুকেশন ইত্যাদি সেক্টরে কিভাবে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট ও লকেল গভর্নমেন্টে কাজ করে তিনি তা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন। তাঁর সুযোগ্য গৃহিণী ডা: জোবায়দা রহমান একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক, বৃটিশ হেলথ সেক্টর বিষয়ে তিনি এখন সম্যক অবগত। তাঁর কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান লন্ডনে বেড়ে উঠা একজন আইনজীবী, বৃটেনের আইন আদালত সম্পর্কে তার ভালো ধারণা গড়ে উঠছে। শুনেছি তিনি বিড়াল পুষেন এবং পরিবেশ সচেতন। এমন একটি আলোকিত পরিবার যার তার নাম তারেক রহমান। তার কাছে দেশের আলোকিত মানুষরা ভরসা রাখতে পারবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
তারেক রহমান নিজে শিকড় থেকে গড়ে উঠা মজলুম নেতা। গত দেড় দশকে এই নেতা লণ্ডনে থেকে তার নিজের পাশে একটি পেশাজীবী থিংক ট্যাংকও গড়ে তুলেছেন বলে শুনেছি। হুমায়ুন ভাইও এই থিংক ট্যাংকে আছেন। আগামীতে তারেক রহমান রাষ্ট্রের ভার গ্রহণ করলে তিনি তাঁর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবিরসহ অন্যদের কাজে লাগাবেন এই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। হুমায়ুন কবিরের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং তার পেশাগত উৎকর্ষ বাংলাদেশের কাজে লাগবে। এটা আমাদের বিশ্বাস
দেশ পুনর্গঠনে পেশাজীবীদের সুযোগ দেয়া প্রয়োজন :
উপসংহারে বলতে চাই ১৯৭৯ সালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতির আমি একজন নীরব দর্শক। গত ৪ দশক ধরে লন্ডনে মিডিয়া জগতে ও লকেল গভর্নমেন্টে কাজ করার সুবাদে এবং বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন এনজিও’এর সাথে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এডুকেশন এবং হেলথ, এনভায়রন সেক্টরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে একথা বলতে পারি- Quality shall prevail., Quantity be Quality’ -এর দিকে নজর রাখতে হবে। গুণগত মান সম্পন্ন নেতা কর্মীরা ছাড়া এডুকেশন, হেলথ, এনভায়রনমেন্ট, এন্টাপ্রেনারশিপ, নারীর ক্ষমতায়ন এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যাবেনা। আর এখানেই দরকার হুমায়ুন কবিরের মতো ব্যক্তিদের।
লেখক : অতিথি সম্পাদক, দৈনিক সিলেটের ডাক।



