কবি এখলাসুর রাহমান এর পরিচিতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০২৩, ৬:৫৫:০০ অপরাহ্ন
অখণ্ড পৃথিবীর স্বপ্নদ্রষ্টা, ‘এখলাসি’র জনক, নিভৃতচারী কবি, যাঁর কবিতা দেশ তথা বিশ্ব পরিমণ্ডলে শ্রমজীবী নিরন্ন মানুষের কানে পৌঁছে দেয় প্রশান্তির অমোঘ বাণী। স্থান-কাল-পাত্র ছাড়িয়ে অবিরত যিনি মজলুম, মজদুর মানুষের কথা বলে যান কবিতা ও এখলাসিতে। তিনিই প্রচণ্ড আত্যপ্রত্যয়ী শক্তিমান কবিÑবিশ্ব শান্তির কবি ‘এখলাসুর রাহমান’।
কবি এখলাসুর রাহমান হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক গ্রামে নানাবাড়িতে ১৩৭৩ বঙ্গাব্দের ৬ কার্তিক জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুশাহিদ মিয়া, মাতা আফিয়া খানম। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তাঁর স্ত্রীর নাম ফরহেনা চৌধুরী রানা। এই দম্পতির দুই সন্তান, কন্যা-নুসরাত জাহান রাইসা, পুত্র-আহমাদ ওয়াসিক।
কবি এখলাসুর রাহমানের স্থায়ী নিবাস সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার স্বজনশ্রী গ্রামে। বর্তমানে তিনি সিলেটের পূর্ব শাহি ঈদগাহের মাতৃছায়া আবাসিক এলাকার অনামিকা-এ/৬৫ নম্বর বাসায় বসবাস করছেন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী।
‘স্বজনশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এ তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি রৌয়াইল দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং উক্ত উচ্চবিদ্যালয় থেকেই এসএসসি পাশ করেন। তারপর তিনি সিলেটের স্বনামধন্য মদনমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে মদনমোহন কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কবির চাকুরি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিবারিক কারণে চাকুরিতে তাঁর যোগদান করা হয়নি। এখানেই তাঁর পয়ালেখার পরিসমাপ্তি। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একবার মরক্কো গমনের জন্য ভিসা লাভ করেন। কিন্তু বিদেশেও তাঁর যাওয়া হয়নি। কবিতার মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভীষণ পছন্দ করেন। অন্যকে স্বপ্ন দেখাতেও ভালোবাসেন। তাই অর্থ-বিত্তের চাহিদা কোনোদিনও তাঁকে পরাভব মানাতে পারেনি। কবি’র বিশ্বাস আল্লাহপাক তাঁকে যেভাবেই রাখেন না-কেন তাতেই তিনি সুখী। তাতেই তিনি সন্তুষ্ট। ছোটোখাটো ব্যবসা করে তিনি কোনোরূপে চার-সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন।
মোটকথা, কবিতাই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান ও সাধনার বিষয়। কাব্যলক্ষ্মীকে করায়ত্ব করতে গিয়ে তিনি জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও উন্নত জীবনের মোহকে বিসর্জন দিয়েছেন। তীব্র প্রতিবাদী এবং সমাজ সচেতন কবি এখলাসুর রাহমান। সমাজের নানাবিধ অন্যায় ও অনাচার দেখলে তাঁর অন্তরাত্মা ব্যথিত হয়ে ওঠে। হুহু করে কেঁদে উঠে তাঁর ভেতরের ব্যক্তিমানস। তিনি তাঁর কবিতায় স্পষ্ট ভাষায় সে সকল অন্যায়, অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। শান্তিপ্রিয় কবি এখলাসুর রাহমান সর্বদা অখণ্ড পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। যেখানে মানুষে মানুষে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে থাকবে না কাঁটা তারের বেড়া। সাম্যের সারিতে বসে একটিমাত্র পরোটা খেতেও কারও কোনো আপত্তি থাকবে না। কবি স্বপ্ন দেখেনÑএকদিন ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অস্ত্র মুক্ত হবে গোটা পৃথিবী। মানুষে মানুষে গড়ে উঠবে সাম্যের সম্প্রীতি। পৃথিবীতে থাকবে না কোনো অস্ত্রাগার। প্রাণঘাতী মরণাস্ত্রগুলো ফুল হয়ে ফুটে থাকবে।
কবির জীবনসূর্য এখন মধ্য গগনে।
এরই মধ্যে তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা কর্তৃক তাঁর কাব্যসাধনার স্বীকৃতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। তন্মধ্যে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে হোয়াইট হাউজ কালচারাল সেন্টার ইউএসএ এবং নেলসন ম্যানডেলা ফাউন্ডেশন আফ্রিকা থেকে অভিনন্দনপত্র লাভ কবির জীবনের উল্লেখযোগ্য অর্জন।
এছাড়াও কাব্যসাহিত্যে তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি স্বনামধন্য মনওয়ার-মিনা ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘মনওয়ার-মিনা সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮’ লাভ করেন।
এখন পর্যন্ত কবি এখলাসুর রাহমানের প্রকাশিত গ্রন্থ ‘অখণ্ড পৃথিবী চাই’ (কাব্যগ্রন্থ-২০০৯) এবং ‘শিশুর হাতে মিষ্টি ছড়া’ (শিশুতোষ ছড়া-২০১৯)।
এছাড়াও কবি হাইকু, তানকা, রুবাই, লিমেরিক-এর মতো নিজেস্ব আঙ্গিকে ছয় লাইনে (৪+২) পর্ব করে লিখে যাচ্ছেন হাজার হাজার ‘এখলাসি’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা অত্যন্ত জনপ্রিয় কাব্যসৃষ্টি। কবি’র রয়েছে কবিতা ও ছড়ার অপ্রকাশিত বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি। এগুলো প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।