ফোরকান আহমদ এর জীবন বৃত্তান্ত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০২৩, ৭:০২:৪৩ অপরাহ্ন
ফোরকান আহমদ একজন আত্মপ্রত্যয়ী, মননশীল ও রুচিশীল লেখক। মানুষের সুন্দর চরিত্র গঠন, নিজকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলা, কী কী কাজ করলে মানুষের চরিত্র উন্নত হয় এবং কীভাবে একজন সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ উন্নতি লাভ করতে পারে, তা তিনি তার প্রতিটি লেখায় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলেন।
ছাত্রাবস্থায় ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ম্যাগাজিনে প্রথম লেখা ছাপা হয়। এরপর বিভিন্ন মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় তিনি লিখেছেন। মূলত কবিতার মাধ্যমেই তার সাহিত্য জগতে প্রবেশ। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আকক্সক্ষার সাগর’ প্রকাশিত হয়। কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখায় তিনি সিদ্ধহস্ত। এ পর্যন্ত তাঁর ২২টি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি বই যথেষ্ট পাঠক-প্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি অত্যন্ত প্রচারবিমুখ মানুষ। কথা নয় কাজের মাধ্যমে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে চান। তাঁর প্রতিটি বইয়ের একাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো বই ১২/১৩ বার সংস্করণ করতে হয়েছে। ‘জীবন গড়ার গল্প’ পরিবেশ ও নীতি আদর্শ শেখার একটি চমৎকার গ্রন্থ। এ বইটি কিউকে আহমদ ফাউন্ডেশন নীতি ও নৈতিকতার উন্নয়ন, নিজকে সৎ ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে দেশের ৫০টি উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত পাঠসূচির অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেখান থেকে কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করা হয়। তাঁর লেখা বই সত্য চিরসুন্দর, বিদ্যা অমূল্য ধন, শান্তির পথ, নিজকে বদলাতে হবে, ভাষার লড়াই ভাষা সমৃদ্ধির লড়াই পাঠক মহলে যথেষ্ট সমাদৃত। তিনি মননশীল প্রবন্ধ রচনা ও পুস্তক সমালোচনা লিখে ইতোমধ্যে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন। আমাদের সমাজে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করছেন, এরকম দেড় শতাধিক লোকের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক প্রদ্যোত পত্রিকায় সাক্ষাৎকার লিখে তিনি সুধী সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
তিনি ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তদানিন্তন সাপ্তাহিক নয়াবার্তার বার্তা বিভাগে যোগদান করেন এবং তিন বছর অর্থাৎ ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর অল্প সময়ের জন্য বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রূয়ারিতে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদে যোগদান করেন এবং উন্নয়ন বিতর্ক নামক একটি ত্রৈমাসিক জার্নালের সহকারী সম্পাদক ও সহযোগী সম্পাদক হিসেবে বিশ বছর যাবত দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই দশক ধরে তিনি এই জার্নালের নির্বাহী সম্পাদক। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের অন্য একটি মাসিক পত্রিকা প্রদ্যোতের ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সহযোগী সম্পাদক এবং বর্তমানে তিনি এ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল অঝওঅ চঅঈওঋওঈ ঔড়ঁৎহধষ ড়হ ঊাারৎড়হসবহঃ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ এর ঊফরঃরড়ৎরধষ অংংড়পরধঃব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নতুন চরিত্র নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সুচারুভাবে পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। এছাড়া তিনি অন্তত দশটি মর্যাদাবান অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।
ফোরকান আহমদ একজন সৃজনশীল প্রকাশক। তিনি পালক পালবিশার্সের স্বত্বাধিকারী। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে পালক পাবলিশার্স প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শ্রেষ্ঠ প্রকাশক হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে আবহমান সামাজিক সংগঠন তাকে শ্রেষ্ঠ লেখক ও প্রকাশক হিসেবে পুরস্কার প্রদান করে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন বিষয়ে আট শতাধিক সুন্দর ও রুচিশীল বই পালক পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এখান থেকে যে-সব লেখকের বই প্রকাশিত হয়েছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বেগম রোকেয়া পদক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, পরিবেশ পদক, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ পানপট্টি যুব কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সমাজকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ রয়েছে (সার্টিফিকেটধারী নন)। তিনি জীবন সদস্য বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট, জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি। সভাপতিÑসমীক্ষা লেখক গোষ্ঠী, সভাপতি-দশদিগন্ত আর্থ-সামাজিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি-আবহমান সামাজিক সংগঠন, পটুয়াখালী জার্নালিস্ট ফোরাম, গলাচিপা উপজেলা কল্যাণ সমিতি, পটুয়াখালী জেলা সমিতি বরিশাল বিভাগ কল্যাণ সংস্থাসহ বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত।
ফোরকান আহমদ ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার পানপট্টিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আমীর হোসাইন মোল্লা এবং মায়ের নাম আংকেজ বানু। মায়ের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থেকে বই পড়ে শৈশব হতে সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ হন। তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বীরপাশা হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ এমএ ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। তাঁর স্ত্রী রেনিচ আহমদ সমাজকর্মী এবং একমাত্র সন্তান রাফসান আহমদ নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসিতে অনার্সসহ মাস্টার ডিগ্রি নিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন।
ফোরকান আহমদ-এর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলোÑআকাক্সক্ষার সাগর (প্রথম প্রকাশ ১৯৮১, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০০৭)। নির্বাচিত ছড়া (সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ ১৯৮১)। অনিরুদ্ধ কথারা আমার (প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮)। সেই দিন সেই রাত (প্রথম প্রকাশ ১৯৯১, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০০০)। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ ১৯৯২, চতুর্থ প্রকাশ ২০০৯)। তালতলার ভূত (প্রথম প্রকাশ ১৯৯৬, দ্বিতীয় প্রকাশ ১৯৯৯, তৃতীয় প্রকাশ ২০০৪, চতুর্থ প্রকাশ ২০০৭, পঞ্চম প্রকাশ ২০০৭, ষষ্ঠ প্রকাশ ২০১০, সপ্তম প্রকাশ ২০১১, অষ্টম প্রকাশ ২০১২, নবম প্রকাশ ২০১৩, দশম প্রকাশ ২০১৫)। আমার কিছু কথা (সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ ১৯৯৬)। বিউটি আর বন মানুষ (অনুদিত) (প্রথম প্রকাশ ১৯৯৯, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০০১, তৃতীয় প্রকাশ ২০১৪, সপ্তম প্রকাশ ২০১৫, অষ্টম প্রকাশ ২০১৬)। সংস্কৃতি ও উন্নয়ন (প্রথম প্রকাশ ২০০৬, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০০৯)। ভূতের পাঁচ পা (প্রথম প্রকাশ ২০০৯, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০১০, তৃতীয় প্রকাশ ২০১১, চতুর্থ প্রকাশ ২০১২, পঞ্চম প্রকাশ ২০১৪, ষষ্ঠ প্রকাশ ২০১৫, সপ্তম প্রকাশ ২০১৬, অষ্টম প্রকাশ ২০১৭, নবম প্রকাশ ২০১৮)। শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক বেগম রাজিয়া হোসাইন : জীবন ও কর্ম (সম্পাদিত প্রথম প্রকাশ ২০০৯)। রাগীব আলী : কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে (প্রথম প্রকাশ ২০১০, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০১৭, তৃতীয় প্রকাশ ২০২০)। জীবন গড়ার কল্প (প্রথম প্রকাশ ২০১১, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০১৪, তৃতীয় প্রকাশ ২০১৫, চতুর্থ প্রকাশ ২০১৭, পঞ্চম প্রকাশ ২০১৮, ষষ্ঠ প্রকাশ ২০১৯, সপ্তম প্রকাশ ২০২০, অষ্টম প্রকাশ ২০২১, দ্বাদশ প্রকাশ ২০২৩)। সত্য চির সুন্দর (প্রথম প্রকাশ ২০১৩, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০১৪, তৃতীয় প্রকাশ ২০১৭)। শেয়ালের ফাঁদে মুরগির পা (প্রথম প্রকাশ ২০১৪, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০১৫, তৃতীয় প্রকাশ ২০১৬, চতুর্থ প্রকাশ ২০১৭)। শান্তির পথ (প্রথম প্রকাশ ২০১৬, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০১৭, তৃতীয় প্রকাশ ২০১৮)। বিদ্যা অমূল্য ধন (প্রথম প্রকাশ ২০১৯)। ড. জসীম উদ্দিন আহমেদের ভাষার জন্য লড়াই, ভাষা সমৃদ্ধির লড়াই (প্রথম প্রকাশ ২০২১, দ্বিতীয় প্রকাশ ২০২২) এবং নিজকে বদলাতে হবে (প্রথম প্রকাশ ২০২১)।